‘সাফে ভালো কিছু করব’, শঙ্কা ও আশার দোলাচলে বললেন কাবরেরা

ঢাকা পর্বের প্রস্তুতি ও চূড়ান্ত দল নিয়ে সন্তুষ্ট বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ আশাবাদী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো কিছু করতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2023, 02:07 PM
Updated : 9 June 2023, 02:07 PM

কখনও তিনি চিন্তিত। কখনও হাসিমুখ। আক্রমণভাগে এলিটা কিংসলে-সাজ্জাদ হোসেনরা নেই কেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একটু উষ্মাও প্রকাশ করলেন হাভিয়ের কাবরেরা। শেষ পর্যন্ত দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আগলে রাখলেন চূড়ান্ত দলকে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করার আশাবাদও শোনালেন প্রত্যয়ী কণ্ঠে। 

বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় চার দিন প্রস্তুতি সেরেছেন কারবেরা। ৩০ জনের দল থেকে বেছে চূড়ান্ত করেছেন ২৩ জনকে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে শুক্রবার দল, সাফের লক্ষ্য, তার আগে কম্বোডিয়া সফরের চাওয়া-সব নিয়ে কথা বললেন জাতীয় দলের কোচ। 

ঢাকা পর্বের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট কাবরেরা। শনিবার দল নিয়ে উড়াল দিবেন কম্বোডিয়ার উদ্দেশে। সেখানে ১২ জুন স্থানীয় দল টিফফি আর্মির বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন। তিন দিন পর স্বাগতিক কম্বোডিয়ার বিপক্ষে খেলবেন একটি প্রীতি ম্যাচ। 

২১ জুন ভারতের বেঙ্গালুরুতে শুরু হতে যাওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে তাই সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার সময় হাতে আছে এই স্প্যানিশ কোচের। এখন পর্যন্ত যতটুকু গুছিয়ে এনেছেন, তাতে তিনি খুশি। এলিটা কিংসলে, সাজ্জাদ হোসেনের আক্রমণভাগে না থাকা, রক্ষণে টুটুল হোসেন বাদশা, রিমন হোসেনের অনুপস্থিতি, কিছুটা চোটে ভোগা তপু বর্মন ও টুটুল হোসেন বাদশার জায়গা পাওয়ার ব্যাখ্যাও দিলেন। 

“ঢাকায় প্রস্তুতির প্রথম পর্ব শেষ করেছি। প্রস্তুতি নিয়ে আমি খুবই ইতিবাচক। চারটি ট্রেনিং সেশনে যে পারফরম্যান্স দেখেছি, চোট নিয়ে কিছু ইস্যুর মুখোমুখি হয়েছি, তবে সব মিলিয়ে যে দল গড়েছি, এদের নিয়েই লক্ষ্য পূরণে কম্বোডিয়া এবং সাফে যাব। দল নিয়ে আমি পুরোপুরি ইতিবাচক।” 

“রিমন, বাদশা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু এ মুহূর্তে তারা তৈরি নয়, এ কারণে অন্যদের ডেকেছি। যারা পর্যাপ্ত ম্যাচ টাইম পেয়েছে, আমাদের সাথে আগে ছিল, যেমন ইসা ফয়সাল, একারণে যাদের ডেকেছি, তাদের প্রতি পুরো আস্থা আছে আমার। আমি নিশ্চিত যেভাবে তারা ট্রেনিং করেছে, এই গ্রুপ প্রস্তুত। ভালো পারফর্ম এবং ফল করতে তাই আশাবাদী আমি।” 

চলমান লিগে ৮ গোল করা কিংসলের পাশাপাশি সাজ্জাদের অনুপস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের বান বয়ে গেল কোচের দিকে। বসুন্ধরা কিংসের আক্রমণভাগে অনিয়মিত এবং জাতীয় দলের হয়ে মাত্র এক গোল করা সুমন রেজার চূড়ান্ত দলে থাকা নিয়ে উঠল প্রশ্ন। কাবরেরার দাবি ‘সেরাদেরই’ বেছে নিয়েছেন তিনি। 

“আপনারা যদি লিগের দ্বিতীয় ধাপ দেখেন সুমন খুব কমই ম্যাচ টাইম পেয়েছে, এলিটাও কম সময় খেলেছে, সাজ্জাদ শেষ তিন ম্যাচ খেলেছে, তো এদের মধ্যে পার্থক্য খুব বেশি নয়। প্রথম লেগে কিংসলে অনেক বেশি খেলেছে, কিন্তু গত তিন মাসে আমিনুর রহমান সজীব ছাড়া কোনো স্ট্রাইকার তেমন ম্যাচ টাইম পায়নি। একারণে আমরা দেখেছি, এ মুহূর্তে কে তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছে, আমরা অনুভব করেছি, এই অল্প সময়ে কে তুলনামূলকভাবে ভালো করতে পারে, সেগুলো। এ কারণে আমাদের মনে হয়েছে, বাকি স্ট্রাইকারদের চেয়ে এগিয়ে সুমন।” 

“(ক্যাম্পে থাকা) এই ৩০ জন প্লেয়ারই চূড়ান্ত দলে থাকার যোগ্য, কিন্তু আমাদের ২৩ জনকে বেছে নিতে হয়েছে; যাদেরকে আমরা সেরা মনে করেছি কম্বোডিয়া ও সাফের জন্য।“  

বাংলাদেশের সাফ মিশন শুরু হবে এবারের আসরে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা লেবাননের (৯৯তম) বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। পরের ম্যাচে প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ, এরপর ভূটান। বাংলাদেশের হাল ধরার পর গত বছর মার্চে মালদ্বীপের মুখোমুখি হয়েছিলেন কাবরেরা। ২-০ গোলের হারের বিষাদ হয়েছিল সঙ্গী। লেবানন ও মালদ্বীপকে সমীহ করলেও নিজ দলে আস্থা রাখছেন কাবরেরা। 

“আপনারা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের রেফারেন্স টানতে পারেন, নিজেদের মতামত দিতে পারেন। আমাদের গ্রুপে লেবানন র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে শারীরিকভাবে তারা খুবই শক্তিশালী। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, লেবাননের বিপক্ষে লড়াইয়ের সামর্থ্য আমাদের আছে। এ ম্যাচটি নিয়ে আমরা দারুণ শিহরিত। এটা আমাদের জন্য শুরুতেই নিজেদের মান, সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ। মালদ্বীপ এবং ভুটানও আছে। বলতে পারেন, লক্ষ্য পূরণের পথে তারা আমাদের সরাসরি প্রতিপক্ষ। লেবানন গ্রুপের বাকিদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে, কিন্তু আমরা তাদের বিপক্ষে ফেস টু ফেস লড়াই করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।” 

“লক্ষ্য পূরণের দৃষ্টিকোণ থেকে, আপনারা বলছেন মালদ্বীপ ম্যাচ সবকিছু নির্ধারণ করে নিতে পারে। আসলে দুই দলেরই কোয়ালিফাই করার জন্য লক্ষ্য হয়ত এই ম্যাচটা নিয়েই এবং এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের লক্ষ্য সেমি-ফাইনালে কোয়ালিফাই করা। যদি এই লক্ষ্য পূরণ করতে হয়, তাহলে আমাদের মালদ্বীপকে হারাতে হবে এবং আমার বিশ্বাস, আমরা সেটা করতে পারব। যদিও সেটা কঠিন, হয়ত তারা র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে, রেকর্ডও হয়ত তাদের পক্ষে, হেড টু হেডে হয়ত তারা বেশি ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু আমরা আশাবাদী। গত তিন মাসে কেবল মালদ্বীপ নয়, প্রতিটি দল নিয়ে কাজ করেছি আমরা।” 

মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলা সবশেষ ম্যাচের দলের চেয়ে বর্তমান দলটি ভিন্ন বলেই দাবি কাবরেরার। সব বাধা পেরিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠার প্রশ্নেও তার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ স্পষ্ট। 

“(মালদ্বীপ ম্যাচের হার) ভালো একটা উদাহরণ টেনেছেন। কোচ হিসেবে সেটা আমার প্রথম ম্যাচ ছিল। ওই ম্যাচের আগে আমরা প্রস্তুতির জন্য খুবই কম সময় পেয়েছিলাম। নিশ্চিতভাবেই ওই ম্যাচটি আমাকে সামনের ম্যাচের জন্য সাহায্যে আসবে। আমি নিশ্চিত, সেই ম্যাচের চেয়ে আমাদের বর্তমান দলটি ভালো। আমার যে আইডিয়া, পরিকল্পনা, আমি মনে করি দল এখন সেটা রপ্ত করার খুব কাছাকাছি। মালদ্বীপের বিপক্ষে ভালো করতে এবং জিততে আমি আশাবাদী।“ 

“অবশ্যই (সেমি-ফাইনালে ওঠা সম্ভব)। প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। কিছু চোট সমস্যা আছে। তবে আমরা ইতিবাচক এবং এই চোট সমস্যাই কারো কারো জন্য এগিয়ে এসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের পারফর্ম করা ও সামর্থ্য দেখানের সুযোগ।” 

কম্বোডিয়া ম্যাচে তাই দুটি চাওয়া কাবরেরার। প্রথমত সাফের জন্য ঠিকঠাক সবকিছু গুছিয়ে নেওয়া; দ্বিতীয়ত, প্রীতি ম্যাচটি জিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়া। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বানও জানালেন তার দলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে পাশে দাঁড়াতে। 

“আমরা মাঠে নামি জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। এটা নিশ্চিত। তবে, অবশ্যই এটা আমাদের জন্য প্রস্তুতি ম্যাচ। আমাদের প্রাধান্য সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, কিন্তু এটাও জানি কম্বোডিয়া ম্যাচ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বুস্ট হতে পারে। তো আমাদের লক্ষ্য জেতা, কিন্তু সাফের প্রস্তুতির দিকেও সবসময় দৃষ্টি থাকবে।” 

“কে দলে আছে, কে নেই, এটা নিয়ে কথা বলার চেয়ে কে আছে, সেটা বলা গুরুত্বপূর্ণ। সবাইকে আমি এই বার্তা দিতে চাই-আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। দলের ব্যাপারে ভালো কিছু বলার চেষ্টা করা, খেলোয়াড়দের নিয়ে প্রশ্ন করা বন্ধ করা উচিত। তো আসুন প্রশ্ন তোলা, সমালোচনা করা, কে দলে নেই তা বলার চেয়ে চেষ্টা করি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কিছু অর্জনের এবং এই দলটির প্রতি বিশ্বাস রাখার। এটাই দল, এই দলটাই লড়াই করবে এই দেশের জন্য, কোয়ালিফাই করার জন্য, সবাইকে গর্বিত করার জন্য। এটাই আমাদের চাওয়া।”