২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ফাইনালে তোলার কথা বলেছিলেন দরিভাল, কিন্তু চরম হতাশাজনক পারফরম্যান্সের ধারায় আর্জেন্টিনার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর চাকরি হারালেন তিনি।
Published : 29 Mar 2025, 09:51 AM
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হয়ে খবরটি ছড়িয়ে পড়েছিল ফুটবল বিশ্বময়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতেও সময় লাগেনি। চরম হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পথ ধরে আর্জেন্টিনার কাছে বিব্রতকর পরাজয়ের পর কোচ দরিভাল জুনিয়রকে বরখাস্ত করল ব্রাজিল।
ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন শুক্রবার বিবৃতিতে জানায়, পরিবর্ত কোচ খুঁজছে তারা।
“দা ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) জানাচ্ছে যে, কোচ দরিভাল জুনিয়র আর ব্রাজিলিয়ান জাতীয় দলের দায়িত্বে নেই। ম্যানেজমেন্ট তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে ও তার ক্যারিয়ারের পথচলার জন্য সাফল্য কামনা করছে। এখন থেকে সিবিএফ তার বদলি খুঁজে নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাবে।”
দরিভালের চাকরি সুতোয় ঝুলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। দলের ব্যর্থতার দায় নিয়েও তিনি দায়িত্বে থেকে যাবেন বলে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু শুক্রবার যখন তাকে বৈঠকে ডাকেন ফেডারেশনের সভাপতি এদনাল্দো রদ্রিগেস, তখনই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় ৬২ বছর বয়সী কোচের পরিণতি।
২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই উপযুক্ত একজন কোচ খুঁজে হয়রান হচ্ছে ব্রাজিল। ওই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায়ের পর দীর্ঘদিনের কোচ তিতের অধ্যায় শেষ হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে কাজ চালিয়ে নেন টানা দুজন কোচ মানো মেনেজেস ও ফের্নান্দো জিনিস। সেই সময়টায় কার্লো আনচেলত্তিকে কোচ করার প্রবল আশায় ছিল ব্রাজিল।
তবে শেষ পর্যন্ত রেয়াল মাদ্রিদের কোচকে আনতে না পেরে গত বছরের জানুয়ারিতে দরিভালের হাতে তুলে দেওয়া হয় জাতীয় দলকে। ২০২২ সালে ফ্লামেঙ্গো হয়ে কোপা লিবের্তাদোরেস ও ব্রাজিলিয়ান কাপ এবং পরের বছর সাও পাওলোর হয়ে ব্রাজিলিয়ান কাপজয়ী কোচের জাতীয় দলের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারানোর পর রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে স্পেনের সঙ্গে ড্র করে তারা ৩-৩ গোলে।
কিন্তু এরপর আর ব্রাজিলের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা ও ধার, কিছুই দেখা যায়নি সেভাবে। বিশেষ করে, গত বছর কোপা আমেরিকায় দলের চরম ব্যর্থতার পর অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন কোচ। ওই আসরে গ্রুপ পর্বে স্রেফ একটি ম্যাচ জিততে পেরেছিল ব্রাজিল। পরে কোয়ার্টার-ফাইনালে জিততে পারেনি ১০ জনের উরুগুয়ের সঙ্গে। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইয়েও বাজে সময় পার করছিল তারা।
তারপরও ব্রাজিলের ফেডারেশনের চাওয়া ছিল, আগামী জুনে উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ দুটি পর্যন্ত তাকে দেখা হবে। ইউরোপিয়ান ক্লাব মৌসুম শেষে ও জুন-জুলাইয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ শেষে অবস্থা বুঝে সম্ভাব্য বিকল্প খোঁজার ভাবনা ছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনার কাছে শোচনীয় পরাজয়ে বেজে যায় তার চূড়ান্ত বিদায় ঘণ্টা। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে প্রথমবার চার গোল হজমের তেতো স্বাদ পেতে হয় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
তার ১৬ ম্যাচের দায়িত্বে ব্রাজিলের জয়-হার সমান সাতটি করে, ড্র দুটি।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এখন পয়েন্ট তালিকার চারে আছে ব্রাজিল। ৪৮ দলের আগামী বিশ্বকাপে এই অঞ্চল থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে ছয়টি দল, আরেকটি দলের সুযোগ থাকবে প্লে-অফ খেলে জায়গা করে নেওয়ার। বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে তাই ব্রাজিলের সংশয় খুব একটা নেই। তবে ব্রাজিলের মতো দলের জন্য মানদণ্ড তো আরও উঁচু।
বাছাইয়ে এখনও পর্যনত ১৪ ম্যাচের পাঁচটিতে হেরেছে ব্রাজিল, গোল হজম করেছে ১৪টি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ইতিহাসে এত বেশি ম্যাচ তারা কখনও হারেনি আগে, এত বেশি গোলও ঢোকেনি তাদের জালে। এত বেশি নেতিবাচক রেকর্ড হয়নি আগে কখনও। ২০২৩ সালে মারাকানায় আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যায় তারা। দেশের মাঠে বাছাইয়ে তাদের ইতিহাসের প্রথম পরাজয় সেটি। এছাড়াও বাছাইয়ে প্রথমবারের মতো কলম্বিয়ার কাছে হারে তারা, উরুগুয়ের বিপক্ষে দুই দশকের বেশি সময়ের অপরাজেয় ধারা শেষ হয়, কোনো আফ্রিকান দলের কাছে কখনও না হারলেও এবার মরক্কো ও সেনেগালের কাছে পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, জয়-হার ছাপিয়ে, ব্রাজিলের খেলার ধরনে কোনো পরিকল্পনার ছাপ পাওয়া গেছে কমই। ক্লাব ফুটবলের মহাতারকারা নিষ্প্রভ থেকেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে।
সেই খেসারত শেষ পর্যন্ত দিতে হলো দরিভালকে।