প্যারিস অলিম্পিকস
২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী তারকা পঞ্চমবারের চেষ্টায় অবশেষে জিতলেন অলিম্পিকসের সোনা, ইতিহাসের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে পূর্ণ করলেন ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম।
Published : 04 Aug 2024, 09:48 PM
টাইব্রেকে জয় নিশ্চিত হতেই র্যাকেট ছুড়ে ফেললেন নোভাক জোকোভিচ। হাঁটু গেড়ে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে উল্লাস করলেন। এরপরই মাথা নুইয়ে দিলেন মাটিতে। চুমু এঁকে দিলেন কোর্টে। সেভাবেই রইলেন বেশ কিছুক্ষণ। এক জীবনের স্বপ্ন পূরণ, এক ক্যারিয়ারের অপূর্ণতা ঘোচানোর মুহূর্তটিতে হয়তো তার মনে পড়ছিল অতীতের আক্ষেপগুলোও। একটু পর উঠলেন। হাসলেন। কাঁদলেন। সব মিলিয়ে কত অনুভূতির ঢেউয়ে যে ভাসতে দেখা গেল তাকে!
ক্যারিয়ারে প্রাপ্তি তার কম নেই। টেনিস ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কীর্তিসহ কত কত রেকর্ড আছে তার সমৃদ্ধ ভাণ্ডারে। তারপরও এই জয় যে বিশেষ কিছু, তা ফুটে উঠল তার উদযাপনেই। এই দিনটির জন্য তার কত দিনের অপেক্ষা, এই মুহূর্তটির জন্য কত স্বপ্নের বুনন! অবশেষে ক্যারিয়ারের গৌধূলি বেলায়, ৩৭ বছর বয়সে এসে দেখা পেলেন সেই আরাধ্য সাফল্যের।
প্যারিস অলিম্পিকসের ছেলেদের টেনিস এককের ফাইনালে ‘বুড়ো ঘোড়া’ জোকোভিচের দাপটে মিইয়ে গেলেন তরুণ তুর্কি কার্লোস আলকারাস। রোলাঁ গাঁরোয় রোববার ফাইনালে দাপুটে পারফরম্যান্সে সার্বিয়ান কিংবদন্তি জিতলেন ৭-৬ (৩), ৭-৬ (২) গেমে।
দুজনের কেউ ফাইনালের আগে হারেননি একটি সেটও। তবে ফাইনালে পরিষ্কার ফেভারিট হয়ে নেমেছিলেন আলকারাস। সপ্তাহ তিনেক আগেই উইম্বলডনের ফাইনালে জোকোভিচকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্পেনের ২১ বছর বয়সী তারকা। এর আগের মাসে তিনি জিতেছেন ফরাসি ওপেনও। কিন্তু অলিম্পিকসের ফাইনালে জোকোভিচ যেন ফিরে গেলেন নিজের সেরা সময়ে। গতিময় সব সার্ভ ও ক্ষুরধার পারফরম্যান্স মিলিয়ে ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচগুলির একটি খেললেন তিনি। চাপের সময়টায় বেশ কিছু ভুল করে বসলেন আলকারাসও।
২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী জোকোভিচের টেনিসের শীর্ষ পর্যায়ে এই একটি অর্জনই কেবল অধরা ছিল। আগে চারবার অলিম্পিকসে খেলে তার প্রাপ্তি ছিল মোটে একটি ব্রোঞ্জ, সেই ২০০৮ আসরে। এরপর আরও তিনবার হেরেছেন সেমি-ফাইনালে। অবেশষে এবারের জয়ে তিনি পা রাখলেন পূর্ণতার সর্বোচ্চ চূড়ায়।
চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের সঙ্গে অলিম্পিক সোনা জয়কে টেনিসে বলা হয় ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম। ইতিহাসের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি পূর্ণ করলেন এই চক্র। তার আগে পেরেছেন স্টেফি গ্রাফ, আন্দ্রে আগাসি, রাফায়েল নাদাল ও সেরেনা উইলিয়ামস।
ইতিহাসের সেরাদের একজনের সঙ্গে এই সময়ের সেরাদের একজনের ম্যাচ ঘিরে অলিম্পিকসে উত্তেজনা ছিল অনেক। ছুটির দিনে দুপুরের বেশ আগে থেকেই জনস্রোত ছিল রোলাঁ গাঁরোর দিকে। ম্যাচ শুরুর অনেক আগেই গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকটা ফুটবল মাঠের মতোই গ্যালারির গর্জন ছড়িয়ে পড়ে অনেক দূর পর্যন্ত। দর্শক সমর্থন জোকোভিচের দিকেই বেশি ছিল বলে মনে হয়েছে।
প্রথম সেটে লড়াই হয় একদম যেন সেয়ানে সেয়ানে। এক ঘণ্টা ৩৩ মিনিট লাগে এই সেট শেষ হতেই। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় সেটও গড়ায় টাইব্রেকে। আলকারাস সহজে হার মানতে চাননি। তবে জোকোভিচের দাপটের সামনে এক পর্যায়ে মাথা নোয়াতেই হয় তাকে।
১৯৮৮ সালে অলিম্পিকসে টেনিস ফেরার পর সবচেয়ে বেশি বয়সে সোনা জয়ের কীর্তি গড়লেন তিনিই।
দুর্দান্ত ফোরহ্যান্ডে দ্বিতীয় সেটের টাইব্রেক জিতেই বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে উঠলেন জোকোভিচ। কোর্টের উদযাপন সেরে তিনি উঠে গেলেন গ্যালারিতে। তার সন্তান, পরিবারের সদস্যদের আলিঙ্গনে জড়িয়ে কাঁদলেন আবার। তার বন্ধুরা, সাপোর্ট স্টাফ, সবাই সেখানে মেতে উঠলেন উদযাপনে।
পরে আবার তিনি নেমে এলেন কোর্টে। চোখে জলের ধারা বইছে তখনও। আলকারাসের চোখেও ততক্ষণে নেমেছে শ্রাবণ। তবে দুজনের অনুভূতি যেমন ভিন্ন, দুজনের অশ্রুর রঙও যেন আলাদা!