“মেশিনকে কমপ্রেসিং করতে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই; দেশের কোথাও ৩/৪ এর বেশি ওঠে না, রাতে ৫ পিএসআই ওঠে,” বলছেন স্টেশন মালিকদের নেতা ফারহান।
Published : 11 Jun 2024, 01:52 AM
সপ্তাহ দুই আগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সাগরে ভাসমান একটি এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সেই ধাক্কা এসে পড়েছে সারাদেশের সিএনজি বা সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশনে।
দেশের পাঁচ শতাধিক স্টেশনের বেশির ভাগেই চাপ নেই, কোনোটির লাইনে গ্যাসই নেই। এ কারণে সিএনজিচালিত যানবাহনে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না স্টেশনগুলো।
আবার গ্যাস না থাকায় কিছু রিফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে। সবমিলিয়ে সংকটে পড়েছেন সিএনজিচালিত যানবাহনের চালক, মালিকরা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় কক্সবাজারের মহেশখালীতে থাকা দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে সামিটের টার্মিনালকে আঘাত করে কয়েকশ টন ওজনের একটি ইস্পাতের পন্টুন। তাতে টার্মিনালের হাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্যালাস্ট ওয়াটার ট্যাংকে পানি ঢুকতে শুরু করে। তবে কর্মীদের চেষ্টায় টার্মিনাল ও তাতে থাকা কার্গো বাঁচানো সম্ভব হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ওই টার্মিনাল সিঙ্গাপুর বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে মেরামত করে আনতে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে বুধবার কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে।
পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগে বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিদিন ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত গ্যাস সরবরাহ করা হত, যার মধ্যে ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট আসে গ্যাসক্ষেত্র থেকে। বাকি ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মিলত এলএনজি টার্মিনাল থেকে।
রেমালের পরে গ্যাসক্ষেত্রের সরবরাহ আগের মত থাকলেও ক্ষতিগ্রস্ত সামিটের এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস মিলছে না। ফলে দিনে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত; যার প্রভাব পড়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিকে।
শনিবার ঢাকার কয়েকটি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টেশনের সামনেই গ্যাসের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের ভিড়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গ্যাস নেওয়ার সুযোগ পেলেও চাপ কম থাকায় সিলিন্ডারে গ্যাস যাচ্ছে কম।
সেদিন দুপুরের পর ঢাকার তেজগাঁওয়ের সাউদার্ন রিফুয়েলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহন লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। গ্যাস নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের লাইন চলে গেছে প্রায় আধাকিলোমিটার দূরের কলোনিবাজার পর্যন্ত।
নভো কার্গো সার্ভিস নামে একটি কোম্পানির মাইক্রোবাসে গ্যাস ভরতে বেলা ৩টা থেকে লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন চালক নুরুজ্জামান। বিকাল সাড়ে ৪টায় রিফুয়েলিং স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছান তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, গাড়িতে গ্যাস পেতে আরও আধাঘণ্টা লাগবে তার।
“গত এক সপ্তাহ ধরে এই সমস্যায় পড়েছি। ৩ ঘণ্টা, ৪ ঘণ্টাও লাগে গ্যাস নিতে। পাম্পে আসলে তারা বলে গ্যাস নাই, গ্যাসের চাপ নাই। এই যে এত কষ্ট করে লাইনে খাঁড়াইলাম, গাড়িতে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকার গ্যাস ধরব। সাধারণ চাপে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার গ্যাস ঢোকে।”
একটি সেডান কারের চালক সায়েদুর রহমান জানালেন, দুপুরের আগে গ্যাস নিতে এসেছেন তিনি। প্রথমে মহাখালীর একটি স্টেশনে গিয়ে গ্যাস পাননি। পরে ডিওএইচএসের বিপরীত পাশের আরেকটি পাম্পে গিয়ে সেখানেও গ্যাস নিতে পারেননি। বিকাল পৌঁনে ৫টায় সাউদার্ন রিফুয়েলিং স্টেশনে গ্যাস ভরার যন্ত্রের কাছাকাছি পৌঁছান সায়েদুর।
তিনি বলেন, এ স্টেশনের সামনেই অন্তত ৩ ঘণ্টা ধরে লাইনে আছেন। কয়েকদিন ধরে গ্যাসের সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে।
“গ্যাস না থাকায় অনেক পাম্প বন্ধ থাকে, চালু থাকলেও গ্যাসের চাপ কম থাকে। গ্যাস নেওয়ার জন্য রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত পাম্পে বইসা থাকা লাগে।”
অপেক্ষাকৃত বৃহৎ এ সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনে আটটি নজল দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গ্যাসের চাপ কম থাকায় শনিবার দুটি নজল দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল।
এ স্টেশনের সহকারী ব্যবস্থাপক ফয়জুর রহমান বিপ্লব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এক মাস ধরেই গ্যাসের চাপ কম, এক সপ্তাহ ধরে সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই (পাউন্ডস পার স্কয়ার ইঞ্চ) থাকার কথা, পিএসআই ৩/৪-ও হয়ে যায়।
“তখন পাম্প বন্ধ করে দিতে হয়। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা পাম্প বন্ধ করে রাখতে হয়। ক্লায়েন্টরাও ব্যাপক কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আসে, দেখা গেছে ২০০-২৫০ টাকার গ্যাস যায়। আর আমাদের সেল কমে অর্ধেকে নেমেছে।”
চাপ কম থাকায় তেজগাঁওয়ের সততা রিফুয়েলিং স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া মহাখালীর ক্লিন ফুয়েল ফিলিং স্টেশন, এসআর এন্টারপ্রাইজ, রয়্যাল ফিলিং স্টেশনসহ প্রতিটি রিফুয়েলিং স্টেশনের সামনের সড়কে গ্যাসের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের ভিড়-ভাট্টা দেখা গেছে।
গাড়িগুলোর চেয়ে খারাপ অবস্থা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের। চাপ কম থাকায় বেশি গ্যাস ভরে না বলে স্টেশনগুলো তিন চাকার এসব বাহনকে গ্যাস দিতে চায় না।
সিএনজি অটোরিকশা চালকদের অনেককেই গ্যাস পেতে ঘোরাঘুরি করতে হয় অনেক জায়গায়। এতে তাদের ট্রিপ কমায় আয় কমেছে বলে জানালেন আবদুর রশীদ নামের এক চালক।
সারাদেশেই একই চিত্র
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ৬০৬টি অনুমোদিত সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন থাকলেও বর্তমানে ৫২৫টির কার্যক্রম চালু আছে। এর বিপরীতে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৪৬২টি সিএনজিচালিত যানবাহন আছে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে রূপান্তরিত (এপ্রিল পর্যন্ত)।
এর বাইরে আমদানি করা ট্যাক্সি ক্যাব ও বিআরটিসির সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা ৪০ হাজার ৩৮৩টি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা আছে এক লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি।
এই বিপুল সংখ্যক যানবাহন জ্বালানির জন্য রিফুয়েলিং স্টেশনের ওপর নির্ভরশীল।
ঢাকার বিমানবন্দর সড়কের নিকুঞ্জ রিফুয়েলিং স্টেশন থেকে গ্যাস ভরতে অপেক্ষমান যানবাহনের সারি দেখা গেছে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত।
মুস্তাফিজুর রহমান নামে একজন চালক বলেন, তার গাড়ি রাইড শেয়ারে চলে। প্রতিদিন অন্তত দুইবার গ্যাস ভরতে হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে গাড়িতে ঠিকমত গ্যাস নিতে পারছেন না।
“একটু আগে গ্যাস নিতে আব্দুল্লাহপুর গেছিলাম। সেখানে রাস্তায় দাঁড়াইতে দেয়নি পুলিশ। এইখানে একঘণ্টা ধরে আছি। গ্যাস ভরতে না পারলে ট্রিপ দেওয়া যাবে না। খুবই সংকটে পড়ে গেছি।”
ঢাকার দোহার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে এসেছেন শহীদুল্লাহ নামের এক চালক। রোগী রেখে নিকুঞ্জে এসেছেন গ্যাস ভরতে।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বললেন, “গ্যাস নিয়া গত কয়েকদিন এত কষ্ট করতেছি, মাঝেমাঝে মনে হয় গাড়ি চালানো ছাইড়া দেই।”
সংকটে পড়েছে ঢাকার বাইরের সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোও।
শনিবার নরসিংদীর মাধবদী এলাকার চারটি রিফুয়েলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটিতে অপেক্ষামান গাড়ির দীর্ঘ সারি। আরেকটি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ।
মাধবদীর ইসলাম সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস ভরার অপেক্ষায় থাকা চালক ফয়সাল আহমেদ বললেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার থেকে ঢাকায় আসার পথে বিশ্বরোড এলাকার একটি গ্যাস স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস ভরেছিলেন তিনি। ওই পথটুকু আসতে গ্যাস শেষ হয়ে গেছে।
“আমার গাড়িতে ৬৫০ টাকার গ্যাস ধরে। কিন্তু ওই পাম্পে চাপ কম থাকায় আড়াইশ টাকার গ্যাস ভরেছি। গ্যাস প্রায় শেষ, আবার ঢাকা থেকে ফেরার জন্যও গাড়িতে গ্যাস ভরতে হবে। এইখানে বড় লাইন, যাত্রীদের নিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে দাঁড়িয়ে আছি।”
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের প্রায় সবগুলো রিফুয়েলিং স্টেশনেই এমন সমস্যার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির মহাসচিব ফারহান নূর ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্টেশন থেকে গাড়িতে গ্যাস দিতে হলে লাইনে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই। এই চাপ পাওয়া যাচ্ছে না কোনো স্টেশনেই। তাতেই সংকট তৈরি হয়েছে।
“মেশিনকে কমপ্রেসিং করতে গ্যাসের চাপ থাকতে হয় ১৫ পিএসআই। আমি দেশের বিভিন্ন পাম্পে খবর নিয়েছি সেখানে ৩/৪ এর বেশি ওঠে না, রাতে ৫ পিএসআই ওঠে। কিছু শিল্প এলাকা ছাড়া দেশের প্রায় সব এলাকায় একই সমস্যা। গ্যাস আমাদের মূল কাঁচামাল, সেটার সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে আমরা প্রোডাকশনে যেতে পারছি না।”
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে সমস্যার সমাধানে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে।
“উনারা বলছেন এলএনজি টার্মিনালের একটা যন্ত্র বিকল হয়েছে। এটা দেশে মেরামত করা যাচ্ছে না। সিঙ্গাপুরে নাকি পাঠিয়েছে ঠিক করে আনার জন্য। এরমধ্যে ঠিক হলে হয়তো দুই সপ্তাহের মধ্যে আবার সরবরাহ বাড়বে।”
এ বিষয়ে জানতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
বেড়েছে লোড শেডিং, সংকট বাসাবাড়ি-কারখানাতেও
দেশজুড়ে তীব্র গরমের কারণে একদিকে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। সবমিলিয়ে লোড শেডিংয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ ছিল না বরিশালের গৌরনদীর হোসনাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তখন ১৫ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে জানান প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এর মধ্যে বুধবার সকাল থেকে এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। এর মধ্যে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে দেখতে ও শুশ্রূষা করতে এসে অষ্টম ও নবম শ্রেণির আরও ১৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরবরাহ করা গ্যাসের ৪১/৪২ শতাংশ পেয়ে থাকে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের আগে এর পরিমাণ সাড়ে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও বর্তমানে তা ১০৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
অথচ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৈনিক চাহিদা ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত।
বিদ্যুৎখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে থেকেই গ্যাসের ঘাটতি থাকয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছিল, এখন সেই গ্যাসও না মেলায় উৎপাদন আরও কমেছে। তাতে গ্রীষ্মকালের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো কঠিন হচ্ছে।
পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার দিনের বেলা সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার পূর্বাভাস থাকলেও বাস্তবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৬৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা তীব্র লোড শেডিংয়ের কথা জানিয়েছেন।
বরদিয়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে তার এলাকায় বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। প্রতিদিন গড়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
গ্যাস সংকটে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
যাত্রাবাড়ীর গৃহিণী হোসনে আরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েকদিন বাসায় গ্যাস থাকছে না।
“শীতের সময় গ্যাস কম থাকে, সেটা আমরা মেনে নিয়েছিলাম, ওই সময় নাকি গ্যাসের চাপ কম থাকে। কিন্তু এই কাঠফাটা রোদের দিনে গ্যাস জমে যায় কীভাবে বুঝি না। সকাল ৬টা থেকে গ্যাসের চাপ একেবারেই থাকে না। গত দুদিন ধরে এমন অবস্থা যে চুলাই নিভে যায়। এখন গ্যাসের বিল তো আমরা ঠিকই দিচ্ছি কিন্তু গ্যাস পাচ্ছি না। তাহলে বিলটা কেন নেওয়া হচ্ছে?"
তিনি বলেন, “গ্যাস না থাকায় ইলেক্ট্রিক চুলাই ভরসা। ইলেক্ট্রিক চুলা জ্বালিয়ে গুনতে হচ্ছে বাড়তি বিল। আবার রান্নার সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিড়ম্বনা তো আছেই।"
উত্তরা এলাকার গৃহিণী নাজনীন সুলতানা বলেন, "গত এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবৎ সকাল ১০টার পর থেকে গ্যাসের চাপ কম থাকে। অবস্থা এমন যে চুলা জ্বালানো আর না জ্বালানো একই রকম।"
গ্যাস সংকটের কারণে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিটিএমএর সদস্য কারখানাগুলোয় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালে এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হয়েছে। আমরা পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এক মাসের আগে এলএনজি সংকটের সমাধান হচ্ছে না।"