মাগুরায় এক দিনে দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যু ঘিরে সারাদেশে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগলেও পুলিশ কোনো কিনারা উদ্ধার করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে মামাবাড়িতে গালায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি লাবনী আক্তার।
অল্প সময়ের ব্যবধানে মাগুরায় পুলিশ ব্যারাকের ছাদে গিয়ে সরকারি অস্ত্র দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান, যিনি ছিলেন খুলনায় লাবনীর সাবেক দেহরক্ষী। মাস দেড়েক আগে মাহামুদুল খুলনা থেকে বদলি হয়ে মাগুরায় যান।
আর গত ১৭ জুলাই ছুটিতে মাগুরায় গ্রামের বাড়িতে যান লাবনী।
লাবনীর বাবা মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার শফিকুল আজম মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরালিদাহ গ্রামে বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
তিনি বলেন, তার মেয়ে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও হাসিখুশি মনের মানুষ ছিল। তার মত মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এটা তিনি ভাবতেও পারছেন না।
“তবে লাবনীর স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক তারেক আব্দুল্লার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিন তাদের মধ্যে ঝাগড়াঝাটি হত। বিশেষ করে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ লেগেই থাকত। মূলত স্বামীর সঙ্গে খারাপ সম্পর্কের জেরেই লাবনী আত্মহত্যা করেছে।”
লাবনীর আত্মহত্যার সঙ্গে তার সাবেক দেহরক্ষী মাহামুদুল হাসানের আত্মহত্যার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, “এ দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক নেই।”
আত্মহননকারী পুলিশ সদস্য মাহামুদুল হাসানের বাবা চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত পুলিশের কনস্টেবল এজাজুল হক খান।
তিনি তার ছেলের সম্পর্কে বলেন, মাহামুদুল খুব হাসিখুশি ও শান্ত মেজাজের ছিলেন। ঘটনার আগের রাতেও ফোনে বাবা-ছেলের কথা হয়।
“কনস্টেবলের চাকরি নিয়ে সে খুশি ছিল না। কারণ এ চাকরিতে অনেক কষ্ট বলে সে তার মাকে বলত। তার ইচ্ছা ছিল পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর পদে চাকরি করার। সেজন্য সে চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে পাংশা কলেজে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছিল। সে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।”
তবে মাহামুদুল কেন অত্মহত্যা করেছেন তা তিনি বলতে পারেননি।
এজাজুল হক খান বলেন, “মাহামুদুল যে খুলনায় এডিসি লাবনী আক্তারের দেহরক্ষী ছিল এটাও তার মৃত্যুর পর জানতে পেরেছি।”
কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের বড় বোন সুমাইয়া খাতুন কুষ্টিয়ায় থাকেন।
সুমাইয়া বলেন, “দুই বছর চার মাস আগে মাহামুদুল পুলিশের চাকরিতে যোগ দেয়। মাহমুদুলকে অনেক স্নেহ করতেন বড় বোন তুল্য লাবনী। লাবনী মাহমুদুলকে শুধু ছোট ভাই ভাবতেন। তাদের মধ্যে কোনো প্রকার দৃষ্টিকটূ সম্পর্ক ছিল না। তাদের এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।”
লাবনীর স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। বর্তমানে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের দুটি মেয়ে রয়েছে।
মাহমুদুল হাসানের মরদেহ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার পিপুলবাড়িয়া গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
আর লাবনী আক্তারে দাফন হয়েছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরালিদহ গ্রামে বাবার বাড়িতে।
মাগুরার পুলিশ সুপার জহিরুর ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে দুই আত্মহত্যার ঘটনায় মাগুরা থানা ও শ্রীপুর থানায় দুটি ইউডি মামলা হয়েছে। পুলিশ দুটি আত্মহত্যার কারণ উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে।
“লাবনী আক্তারের পারিবারিক কলহ ও একই দিনে সাবেক দেহরক্ষী মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার বিষয়সহ সব দিক মাথায় রেখে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তদন্তে কোনো ক্লু পাওয়া গেলে তা সাংবাদিকদের সময়মত জানানো হবে।”