আহমদিয়াদের ওপর হামলার উসকানি ছিল পরিকল্পিত: পুলিশ সুপার

“পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের প্রায়োরিটি ছিল কোনো প্রাণহানি যাতে না ঘটে।”

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 02:28 PM
Updated : 9 March 2023, 02:28 PM

সারাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহলের উসকানিতে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

তিনি বলেন, “হামলায় পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য আহত হয়েছেন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। হামলাকারীরা একজন পুলিশ সদস্যকেও পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমানে পঞ্চগড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিরাজুল হুদা এসব কথা বলেন। 

শুক্র থেকে রোববার তিন দিনব্যাপী আহমদিয়া সম্প্রদায় সালানা জলসার আয়োজন করে। এই জলসা বন্ধ ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে পঞ্চগড় শহরে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিক্ষুব্ধরা।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরে বড় মিছিল হয়। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক পুলিশের স্টেশন, পঞ্চগড় বাজার মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানপাট ভাঙচুর এবং বিকালে আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ সময় শহরের মসজিদ পাড়া মহল্লার ফরমান আলীর ছেলে আরিফুর রহমান এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রাতে দুজনকে আহমদিয়ারা গলা কেটে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা এমন গুজব ছড়ায়। দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নিজেরা লাশ দেখে এসেছেন জানিয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করে তোলে। এ নিয়ে ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা। এ সময় দুটি দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুটপাট এবং একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, “পরিস্থিতি সামলাতে আমাদের প্রায়োরিটি ছিল কোনো প্রাণহানি যাতে না ঘটে। এজন্য কোনো কোনো মহল আমাদের নানা ঘাটতির কথা উল্লেখ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ ও নানা কৌশল অবলম্বন করি। এতে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।

“খুব স্বল্প সময়ে, মাত্র চার ঘণ্টায় গুজব রটনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব গোটা দেশেই পড়ত।”

এ পর্যন্ত ১৩ মামলায় ১৬৫ জনকে যৌথ বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তাদেরকে ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও যাচাই-বাছাইয়ে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে গুজব সৃষ্টিকারী, উসকানিদাতা ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জাহিদ হাসান হত্যাকাণ্ডের মামলার দুজন আসামিও আছেন। দুজনই তিন দিনের রিমান্ডে আছেন। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ সময় সাংবাদিকরা আন্দোলনকারী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করলে পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তে কারও নাম এলে কেউ ছাড় পাবেন না। অকারণে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। তবে অপরাধীদের মনে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ ও আতঙ্ক থাকবে।”

এ সময় তিনি দেশের স্বার্থে গণমাধ্যম কর্মীদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার আহ্বান জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস এম শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাকিবুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিঞা উপস্থিত ছিলেন।