জিআই স্বীকৃতি ভৌগোলিক পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখে।
Published : 14 Feb 2024, 03:40 PM
বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক জিআই পণ্য হিসেবে গোপালগঞ্জের রসগোল্লা স্বীকৃতি পেয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, “একটি বিশেষ পণ্য চেনার জন্য জিআই স্বীকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো পণ্যের বিস্তারিত না জানলেও খ্যাতির উপর নির্ভর করে সেই পণ্য ব্যবহার করতে পারে ভোক্তারা।
“এ ছাড়া এটি ভৌগোলিক পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নয়নে অবদান রাখে।”
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, গত বছরের ২২ অগাস্ট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ই কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার-ইডিসির সহযোগিতায় গোপালগঞ্জের রসগোল্লাকে জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রসগোল্লা গোপালগঞ্জ জেলার প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি লাভ করেছে।
ই কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার বলেন, “গোপালগঞ্জের রসগোল্লা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। আমরা লজিস্টিক ও অন্যান্য সপোর্ট দিয়েছি। অবশেষে এটির স্বীকৃতি মিলেছে। এটি জেলার অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করবে।”
ইডিসির ট্রেজারার উম্মে সাহেরা এনিকা বলেন, “আমি গোপালগঞ্জের রসগোল্লা নিয়ে কাজ করেছি। এটি এক প্রকার রসালো মিষ্টি। এটি খাঁটি ছানা আর চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে ময়দার কোনো ব্যবহার নেই। এই রসগোল্লা দেখতে সাদা ও গোলাকার আকৃতির হয়।
“গোপালগঞ্জের রসগোল্লায় মিষ্টির পরিমাণ খুবই কম। রস বা চিনির সিরা পাতলার কারণে এ রসগোল্লার স্বাদ দেশের যে কোনো অঞ্চলের রসগোল্লার চেয়ে ভিন্ন। খেতে সুস্বাদু।”
সংবাদ সম্মেলনে ইডিসির পরিচালক (যোগাযোগ) পলাশ চন্দ্র শীল, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মুন্না, মাহবুব হোসেন সারমাত ও সুব্রত সাহা বাপী অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ভৌগলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন- জিআই) হচ্ছে- একটি প্রতীক বা চিহ্ন, যা পণ্য ও সেবার উৎস, গুণাগুণ ও সুনাম ধারণ ও প্রচার করে। কোনো দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশ যদি কোনো পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব রাখে, সেই দেশের সংস্কৃতির সাথে যদি বিষয়টি সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেটাকে সে দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর জিআই নিবন্ধন দেয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত আইন এবং ২০১৫ সালে বিধিমালা হয়।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের স্বীকৃতি পায় জামদানি। এরপর ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, ঢাকাই মসলিন, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, নেত্রকোণার বিজয়পুরের সাদামাটি, বাংলাদেশের কালিজিরা চাল, বাগদা চিংড়ি এবং রাজশাহী-চাপাইনবাগঞ্জের সুস্বাদু ফজলি আম এ স্বীকৃতি পায়।
ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্টস, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) জিআই সনদ দেয়।