১৫ বছরে সিলেট-৪ আসনে সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের আয় বেড়েছে তিন গুণ; পাশাপাশি স্ত্রীরসহ তার অস্থাবর সম্পত্তির বেড়েছে ২২ গুণ।
Published : 05 Dec 2023, 07:59 AM
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদের আয়ের পাশাপাশি বেড়েছে সম্পত্তিও। তবে মন্ত্রী-পত্নীর সম্পদ তার চেয়ে বেড়েছে বেশি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে ইমরান আহমদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কেটে দেন।
ইমরান আহমদের স্ত্রী অধ্যাপক নাসরিন আহমদ ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজ হলফনামায় বার্ষিক আয় ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ২৫১ টাকা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে আয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা দেখিয়েছেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে ইমরান আহমদের আয় বেড়েছে তিন গুণ; একই সঙ্গে তার স্ত্রী ও পরিবারের ওপর নির্ভরশীলদের আয় শূন্যের ঘরে নেমেছে। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির বেড়েছে ২২ গুণ।
২০০৮ সালে ইমরান আহমদ ও তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩৪ লাখ আট হাজার টাকা; যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৭৭ লাখ পাঁচ হাজার ২৮ টাকা।
নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় তার দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পেশায় চা ব্যবসায়ী ও পরামর্শক ইমরান আহমদের বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। সেই সময় তার ওপর নির্ভরশীলদের (পরিবারের অন্য সদস্য) বার্ষিক মোট আয় ছিল ১১ লাখ ১১ হাজার টাকা।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে ইমরানের বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৮২ হাজার এবং ২০১৮ সালে একাদশ সংসদের সময় যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯ লাখ ৫১ হাজার টাকায়।
২০১৪ সালে ইমরান আহমদের ওপর নির্ভরশীলদের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। তবে ২০১৮ সালে নির্ভরশীলদের আয় প্রদর্শন করেননি তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ইমরান বার্ষিক আয় ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ২৫১ টাকা; যার মধ্যে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ টাকা। বাকি টাকা ব্যবসা, শেয়ার ও ব্যাংকের সুদ থেকে এসেছে। এবারও তার উপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় প্রদর্শন করেননি তিনি।
২০০৮ সালে ইমরানের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ নগদ টাকা, শেয়ার ও অন্যান্য মিলে ছিল পাঁচ লাখ ৫২ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা; যার মধ্যে রয়েছে একটি গাড়ি ও নগদ টাকা।
২০১৪ সালে ইমরানের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ লাখ ৯২ হাজার টাকা; যার মধ্যে ২২ লাখ ৮৯ হাজার নগদ ও বাদবাকি শেয়ার, গাড়ি ও অন্যান্য। সে সময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ টাকা; এর মধ্যে ৫৫ লাখ টাকা নগদ।
২০১৮ সালে ইমরানের অস্থাবর ও স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা; যার মধ্যে নগদ আট লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে আমানত এক কোটি টাকা এবং শেয়ার, গাড়ি ও অন্যান্য রয়েছে। এ সময় তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ হয় এক কোটি ৭১ লাখ টাকা; যার সিংহভাগই ব্যাংকে আমানত।
বর্তমান হলফনামায় ইমরানের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৯ টাকা। যার মধ্যে সাড়ে ৩১ লাখ টাকা নগদ, এক কোটি ৫৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা, নয় লাখ ৬২ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৭ লাখ ৭০ হাজারের গাড়ি, এক কোটি ২৯ লাখ টাকা অন্যান্য ব্যবসায় পুঁজি ও অন্যান্য খাতে ৯০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
আর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৭০ হাজার টাকা; যার মধ্যে তিন কোটি ৫৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যাংকে, ৪২ লাখ ৩৭ হাজারের দুটি গাড়ি ও ৫০ হাজারের স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।
স্থাবর সম্পত্তির হিসেবে ২০০৮ সালে ইমরানের ছিল ৫৫ হাজার টাকার কৃষি জমি আর তার স্ত্রীর নামে এক কোটি তিন লাখ টাকার একটি দালান ও অকৃষি জমি।
২০১৪ সালে ইমরানের স্থাবর সম্পত্তি অপরিবর্তিত থাকে, তবে শ্রীপুর চা বাগানের ব্যক্তিগত মালিকানার একটা অংশ ২০১২ সালে সরকার থেকে ইজারা নেওয়ার তথ্য প্রদর্শন করা হয়। সে সময় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তিও অপরিবর্তিত থাকে।
২০১৮ সালের হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে পৈত্রিক ২৪ দশমিক ২৭ একর জমির কথা উল্লেখ করেন; তবে তার মূল্য প্রদর্শন করেননি তিনি। সে সময় তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তিও অপরিবর্তিত দেখানো হয়।
বর্তমান হলফনামায় মন্ত্রী ইমরান স্থাবর সম্পত্তির হিসাব ২০১৮ সালের হলফনামার সমান পরিমাণ কৃষি, অকৃষি ও চা বাগানের মালিকানা এবং ইজারার বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেইসঙ্গে তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি অপরিবর্তিত রয়েছে।