চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান রোববার বিকাল ৫টায় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তা বাতিল করেন।
তবে ওই প্রার্থী চাইলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আগামী তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর ইউসুফ গাজী সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।
সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে সদ্য পদত্যাগী চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আনেন। পরে নির্বাচন কমিশন অভিযোগের শুনানি করে ইউসুফ গাজীর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দিয়াশলাই ফ্যাক্টরিতে কাঠ সরবরাহের যৌথ ব্যবসার প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে ২০০৪ খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন হুমায়ুন কবির নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।
ওই মামলায় আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিলেও ২০০৮ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খুলনা দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আপিল শুনানি শেষে ইউসুফ গাজীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ রায় তিনি গ্রেপ্তার তথা আত্মসমর্পণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সেই সঙ্গে আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে সাজা ভোগের জন্য খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর ওই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে হাই কোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করে দণ্ডাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ২০১৭ সালে রিট পিটিশনটি পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে বিচারপতি মাইনুল হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের আদালত দণ্ডাদেশের স্থগিতাদেশ বাতিল করে পাঁচ বছরের সাজা ও অর্থদণ্ড বহাল রাখেন।
এরপর ইউসুফ গাজী উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে ২০১৭ সালে একটি পিটিশন দায়ের করলেও আদালত দণ্ডাদেশ স্থগিত না করে ১০ সপ্তাহের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু পিটিশন দায়েরের নির্দেশ দেন। না হলে তা খারিজ হবে বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু ইউসুফ গাজী ২০১৯ সালে লিভ টু আপিল করেন।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওচমান গনি পাটওয়ারী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, যেহেতু আসামি আপিল আদালতের রায় অনুযায়ী আত্মসমর্পণ না করে পলাতক থাকেন এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির মাধ্যমে সাজা পরোয়ানা জারি করতে দেননি- তাই তিনি বর্তমানে আইনের চোখে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে চিহ্নিত।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ আইন ২০০০ এর ৬(২)ঘ ধারা অনুযায়ী ‘নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধের কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার যোগ্য হবেন না।’ এ অবস্থায় তার নির্বাচনী মনোনয়নপত্র বাতিলযোগ্য ও তিনি নির্বাচন করার অযোগ্য।
যদিও মনোনয়নপত্র বাতিলের আগে ইউসুফ গাজী বলেছিলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আপত্তি দিতেই পারেন। আমি আমার তথ্য-উপাত্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে উপস্থাপন করবো। আশা করি, আপত্তিতে কোনো সমস্যা হবে না।”
এদিকে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা যাচাই-বাছাই শেষে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, সাধারণ সদস্য পদে ৩২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান পদে একজন, সাধারণ সদস্য পদে সাতজন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে একজনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা আগামী তিন দিনের মধ্যে আপিল করার সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন:
· জেলা পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন ১৯ জন
· জেলা পরিষদের দ্বিতীয় ভোট ১৭ অক্টোবর
· জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যারা
. জেলা পরিষদ: কুমিল্লায়ও বিনা ভোটে জয়ের পথে আওয়ামী লীগ প্রার্থী