ঋতুপর্ণা-রূপনার সাফল্যে এলাকাবাসী পাচ্ছে সড়ক আর সেতু

ঋতুপর্ণার মা বসুবতি চাকমা বলেন, “আমার মেয়ের সাফল্যে গ্রামবাসী যদি সড়ক পায়, এটা খুবই আনন্দের।”

ফজলে এলাহীরাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2022, 09:07 AM
Updated : 22 Sept 2022, 09:07 AM

রাঙামাটির দুই কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা আর রূপনা চাকমা দেশের জন্য জিতে এনেছেন সাফ ফুটবলের শিরোপা; তবে তাদের এই সাফল্যে এলাকাবাসী উপহার পাচ্ছে আরও বেশি কিছু।

ঋতুপর্ণার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ির দুর্গম গ্রামে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তার বাড়ি যেতে হাঁটতে হয় প্রায় তিন কিলোমিটার পথ।

সেই পথের একটা বড় অংশে ধানি জমি। আইল ধরে হেঁটে বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে হয় ঋতুপর্ণাদের। মগাছড়ি এলাকার সবাইকেই বর্ষা মৌসুমে পথ চলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বহুদিন ধরে তারা সড়কের আবেদন জনিয়ে এলেও তাতে সাড়া মেলেনি। বাংলাদেশের মেয়েরা গত সোমবার নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শিরোপা জিতে নেওয়ার পর বদলে গেল অনেক কিছু।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মঙ্গলবার গেলেন ঋতুপর্ণার বাড়িতে।পথের অবস্থা দেখে ঘাগড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনকে তিনি সড়ক নির্মাণের কাজ শুরুর করার নির্দেশ দিলেন। তাতে দুর্গম ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পথ তৈরি হল।

ইউপি চেয়ারম্যান আজিম বলেন, “সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশায় পুরো পাড়ার মানুষ দিনের পর দিন ঘুরেছেন এখানে সেখানে। সেই সড়কটি হঠাৎই নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তারা।”

ঋতুপর্ণার মা বসুবতি চাকমা বললেন, “আমার মেয়ের সাফল্যে গ্রামের মানুষ যদি সড়ক পায়, এটা তো খুবই আনন্দের। আমাদের সবার জন্য সড়কটা খুব দরকার। বর্ষা মৌসুমে খুব কষ্ট হয় আমাদের। সড়ক নির্মাণ হলে খুব উপকার হবে।”

সাফজয়ী দলের রূপনা চাকমার ওপর দায়িত্ব অনেক, তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গোলপোস্ট সামলান। কিন্তু নিজের বাড়ির পথে তাকে এতদিন যাতায়াত করতে হত ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে। সেই সাঁকোর জায়গায় এখন সেতু নির্মাণের তোরজোর শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ৫ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদম এলাকার গাছামনি চাকমা ও কালা সোনা চাকমার মেয়ে রূপনা জন্মের পর বাবার মুখ দেখেননি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট । আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তাদের জরাজীর্ণ বাড়িতে।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশের পর নানিয়ারচর উপজেলা প্রশাসক রূপনা চাকমার বাড়ির পথে সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছে।

বিষয়টি জেনে এলাকার লোকজনর পাশাপাশি খুশি রূপনার মা কালাসোনা চাকমাও। তিনি বললেন, “এই সাঁকো খুবই বিপদজনক। সেতু হলে এলাকার মানুষের অনেক উপকার হবে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “‘রূপনা ও ঋতুপর্ণা আমাদের রাঙামাটির গর্ব। তাদের এই অর্জনে সারাদেশের মানুষ গর্বিত। রূপনার পরিবারের একটা ঘর এবং এলাকার ব্রিজ প্রয়োজন। আর ঋতুপর্ণার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা প্রয়োজন। আমি বিষয়গুলো দেখছি এবং যতটুকু করা সম্ভব তার সবই করব।”

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রূপনাকে ঘর করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “তার বাড়ি যাওয়ার পথের সেতুটি এবং ঋতুপর্ণার বাসায় যাওয়ার সড়ক করে দিতে নির্দেশ দিয়েছি আমি। আশা করছি, শিগগিরই এসব কাজ শুরু হবে। মেয়ে দুটির জন্য কিছু করতে পারলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে।”

আরও পড়ন:

Also Read: সাফজয়ী রূপনা চাকমাকে ঘর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

Also Read: সাফ জয়ী মেয়েদের পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী

Also Read: চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা হবে ‘ট্যাবু ভাঙার সাহস’

Also Read: মেয়েদের ফুটবলে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, পাহাড়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

Also Read: মেয়েদের সাফ ফুটবল জয়, আনন্দে ভাসছে কলসিন্দুর