গাজীপুর মহানগর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাফিক, এপিবিএনসহ এক হাজার সদস্য কাজ করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 20 Apr 2023, 10:54 AM
ঈদযাত্রায় যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে, এতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে যানজট নিরসনে কাজ করছে রোভার স্কাউট সদস্যরাও।
বিশেষ করে টঙ্গীর স্টেশন রোড, ভোগড়া বাইপাস মোড় এবং জয়দেবপুর-চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ি ও মানুষের বেশি ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি ও ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। তবে কোথাও এখনও যানজট নেই।”
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি বলেন, “তবে মহাসড়কে এখন চাপ কিছুটা কম হলেও তা আবারও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।”
ভোগড়া বাইপাস মোড়ে কর্তব্যরত গাজীপুরের রোভার স্কাউট সদস্য মো. সাইদুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর ধরেই ঈদে ঘরমুখো মানুষের সহায়তা করে যাচ্ছি। এ বছর ভোগড়া বাইপাসসহ চান্দনা-চৌরাস্তা, টঙ্গী, চন্দ্রা, রাজেন্দ্রপুরে পাঁচটি টিমে পুলিশের সঙ্গে রোভাররা ট্রাফিকিংয়ের সহায়তার কাজ করছি। আমরা বিশেষ করে যাত্রীদের পথ নির্দেশনা, রাস্তা পারাপার, ছিনতাই ও মলমপার্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে থাকি।”
গাজীপুরের ভোগড়া স্টার লাইট সোয়েটার কারখানার শ্রমিক সাখাওয়াত মা, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ যাবেন। বাস না পেয়ে এখন ভোগড়া পেয়ারা বাগান বাস কাউন্টারের দিকে হাঁটছেন তারা।
তিনি বলেন, “সিরাজগঞ্জ যাওয়ার জন্য ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা বাসগুলোতে যাত্রী বোঝাই থাকায় কোনো সিট পাচ্ছি না।”
চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকাও একই পরিস্থিতিতে পড়েন কিশোরগঞ্জের যাত্রী মো. জোনায়েদ। তিনি বলেন, “বাসে উঠতে না পেয়ে সিএনজিতে মাথাপিছু সাড়ে চারশ টাকা করে ভাড়ায় কিশোরগঞ্জ শহরে রওনা হয়েছি।”
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এদিন খালি ট্রাকে এবং ট্রাকের মালের উপর যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে সকাল ৮টার দিকে ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে ট্রাকে লালমনিরহাটে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। ওই ট্রাকের হেল্পার নাজমুল হক জানান, ঢাকায় পণ্য খালাস করে ফেরার পথে তারা যাত্রী নিয়ে যাচ্ছেন। ভোগড়া বাইপাস থেকে তারা ১০০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছে।
ট্রাকের যাত্রী সামসুল হক বলেন, “গাড়ি না পেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ট্রাকেই গ্রামের বাড়ি ফিরছি।”
এ ব্যাপারে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাস্তায় ট্রাক থামাতে গিয়ে যানজট আরও বেড়ে যায়, তাই এদের না আটকে দ্রুত পাস করানোর চেষ্টা করছি।”
চাপ থাকলেও যানজট নেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে
এদিকে গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকলেও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন সালনা কোনাবাড়ি হাইওয়ে পুলিশের ওসি আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ঢাকার গাবতলী হয়ে উত্তরবঙ্গের বাসগুলি চলাচল করে চন্দ্রা থেকে নবীনগর সড়ক হয়ে। এই সড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোথাও যানজট নেই।
“মহাসড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাইওয়ে পুলিশসহ জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় ঘরমুখো মানুষের চাপ রয়েছে। তারা বিভিন্ন বাসে উঠার চেষ্টা করছে। ”
এই পথে চলাচল করা শ্যামলী পরিবহনের চালকের সহযোগী আসাদুল ইসলাম বলেন, “সকালে কোথাও যানজটে আটকাতে হয়নি। চন্দ্রা এলাকা পর্যন্ত সড়ক সব জায়গায় স্বাভাবিক ছিলো।”
উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, চান্দনা-চৌরাস্তাসহ একাধিক স্থানে গাজীপুরে চলমান বিআরটি প্রকল্পে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের মালামাল ও লোহার সরঞ্জাম থাকায় এবং ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে পথচারী পারাপার হতে গিয়ে গাড়ির গতি ধীর হচ্ছে।
“গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আন্ডারপাস, ফুট ওভারব্রিজ না থাকায় রাস্তা পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। গাড়ির লম্বা টেইল তৈরি হচ্ছে। কিছু স্থানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার জন্যও গাড়ির স্বাভাবিক গতি কমে হচ্ছে। আমরা এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।”
তিনি জানান, মহাসড়কের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর মহানগর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, এপিবিএনসহ ১০০০ পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।
এছাড়া যানজট নিরসনে নয়টি রেকার, আটটি প্রসিকিউশন টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সও কাজ করছে। রাস্তায় থ্রি-হুইলার, ইজিবাইক বন্ধ করার জন্য প্রসিকিউশন টিম কাজ করছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত করা ও ছিনতাই প্রতিরোধে থানা পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান উপ-কমিশনার আলমগীর।