আহমদিয়ার ওপর হামলা বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনায়: তথ্যমন্ত্রী

আহমদিয়াদের বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক বলে দাবি তথ্যমন্ত্রীর।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 04:37 PM
Updated : 12 March 2023, 04:37 PM

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পরিকল্পনায় পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও মস্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। 

রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ফুলতলা, শালশিরি, আহমদনগর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও দোকানপাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ মন্তব্য করেন। 

এদিকে, এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের যোগসাজস রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির তদন্ত দল।   

আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে গত ২ থেকে ৪ মার্চ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ফুলতলা, শালশিরি, আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়াদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। 

ঘটনাস্থর পরিদর্শন শেষে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আহমদিয়াদের বাড়িঘর, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক। যারা সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় সেই বিএনপি-জামায়াতের মহাপরিকল্পনারই অংশ ছিল। 

২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিএনপি-জমায়াত যেভাবে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে ঠিক সেভাবেই এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে তার ভাষ্য। 

এই হামলার জন্য আগে থেকেই উসকানি ছড়ানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “বাঁশের কেল্লা কারা ব্যবহার করে সবাই জানে।” 

বিএনপির পদত্যাগকারী দুই সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাদের ফেইসবুক থেকে উসকানি দিয়ে সংঘঠিত করে গুজব ছড়িয়ে এই হামলা করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রশিবিরের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনিটর করা হয়েছে ঢাকা ও লন্ডন থেকে।” 

তিনি বলেন, “গত ২-৪ মার্চ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর যে নারকীয় ঘটনা ঘটনো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে সরেজমিনে এ ঘটনা দেখতে এসেছি।”

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চিত্র দেখে তিনি এ ঘটনাটিকে ‘পৈশাচিক’ ও ‘নারকীয়’ বলে উল্লেখ করেন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

গণ্ডগোল লাগিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ইসলামের নামে এমন ঘটনা ইসলাম সমর্থন করে না। তারা ইসলামের গায়ে কালিমা লেপন করেছে। তারা ইসলামেরও শত্রু।” 

তিনি বলেন, “আমাদের দলের নেতাদেরও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তারা পুলিশ বক্সে হামলা করে পুড়িয়ে দিয়ে একজন পুলিশ সদস্যকে পুড়িয়ে মারার অপচেষ্টা করেছে,  রক্ষা পায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। ডিসি, এসপি অফিস আক্রমণের পরিকল্পনাও ছিল।” 

এ সময় রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। 

বিকালে জেলা শহরের শেরে বাংলা পার্কের মুক্তমঞ্চে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

রেলমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে দলের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, জেলা সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসেন ও নাঈমুজ্জামান মুক্তা এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত বক্তব্য রাখেন। 

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তরফে তিন দিনের সালানা জলসা আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে বিরোধিতা শুরু করে স্থানীয় একটি পক্ষ। তারা ওই অনুষ্ঠানের আগের দিন ২ মার্চ থেকে জলসা বন্ধ এবং আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে পঞ্চগড় শহরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে। 

জলসার দিন ৩ মার্চ জুমার নামাজের পর ওই পক্ষটি শহরে বড় মিছিল বের করে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়, চলে ধাওয়া-ধাওয়ি। তখন ট্রাফিক পুলিশ বক্স, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়; আর বিকালে সদর ও বোদা উপজেলায় আহমদিয়াদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এই সংঘাতে দুজনের প্রাণহানির পাশাপাশি অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। 

এদিকে, রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগের যোগসাজশে এ হামলা করা হয় দেশে-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করার জন্য। 

সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত বিএনপির কমিটির প্রধান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা কয়েকজন ভিকটিমের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে যে এটি পরিকল্পিত এবং যারা করেছে তাদের নাম-ধামও আমাদেরকে বলেছে। মোতাহার, আবদুর রহমান- ব্যক্তিদের নাম বলেছে তারা। যে মামলা করা হয়েছে সেই মামলায় তাদের নাম নাই।” 

“রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাহেব যখন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তখন ভিকটিমরাই তাকে (মন্ত্রীকে) বলেছে, যারা আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়েছে, তারা তো আপনার সাথেই আছে।” 

এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তার পাশে ছিলেন। 

আরও পড়ুন-        

আহমদিয়াদের বাড়িতে আগুন-হামলা ‘কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই’ 

রেলমন্ত্রীকে পেয়ে আহমদিয়াদের ‘ক্ষোভ’, শাস্তির আশ্বাস  

পঞ্চগড়ের সহিংসতা তদন্তে বিএনপির কমিটি