‘জীবনমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ` মজুরি চান শ্রমিকরা

শ্রম দপ্তরের বৈঠকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হন মালিকপক্ষ; কিন্তু এটি চা-শ্রমিকদের জীবনমানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।

বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2022, 06:26 PM
Updated : 18 August 2022, 06:26 PM

দাবির ৩০০ টাকা হলেও জীবনমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মজুরি পেলে চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দেশের চা বাগানগুলোর পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত ভ্যালি কমিটির সভাশেষে এ কথা বলেন শ্রমিক নেতারা।

ঢাকায় শ্রম দপ্তরে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকের বিষয়ে জানাতে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বিকালে দেশের সাত ভ্যালির প্রত্যেকটিতে বৈঠক হয় বলে জানান চা শ্রমিক নেতা পরেশ কালিন্দি।

তিনি বলেন, চা শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও শ্রম অধিদপ্তরের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকেও কোনো সিন্ধান্ত আসেনি। ফলে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকছে। তবে এ এ বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে তারা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

তিনি বলেন, “শ্রম দপ্তরের বৈঠকে ১২০ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হন মালিক পক্ষ। এটি চা শ্রমিকদের জীবনমানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।”

সভা শেষে শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বলেন, বাগানে পাতা নষ্ট হচ্ছে। এটি নষ্ট হলে মালিক পক্ষের তেমন কিছু যায় আসে না। কিন্তু শ্রমিকরা বঞ্চিত হবে হাজিরা থেকে।

“আমরা চাইনা এভাবে পাতা নষ্ট হোক। শ্রমিকরা কষ্ট পাক। তাই মালিকদের প্রতি আহবান তিনশত টাকা না হোক জীবনমানের সাথে কিছুটা সামঞ্জস্য রেখে মানসম্মত একটা মজুরি ঘোষণা দিলে আমরা কাজে যোগ দেব।”

এই সিদ্ধান্তের কথা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে মালিকের কাছে পৌঁছানোর জন শ্রম অধিদপ্তরে জানানো হবে বলে পরেশ কালিন্দী জানান।

বৃহস্পতিবার বিকালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বালিশিরা ভ্যালির এ সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা পংকজ কন্দ, শিউধন কুর্মী, পরেশ কালিন্দি ও বালিশরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা ও এই ভ্যালির নিয়ন্ত্রিত প্রত্যেকটি চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধানরা।

শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক মহসীন মিয়া মধু বলেন, কর্মবিরতিতে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চা শিল্প প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে। এভাবে আন্দোলন অব্যাহত থাকলে লোকসানের পরিমাণ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।

প্রতিদিন অন্তত ১০ থকে ১২ কোটি টাকার পাতা এখন নষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান।

মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘটের মধ্যে মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর দিনব্যাপী আলোচনা হয়। কিন্তু এতে সমঝোতা হয়নি। পরে বুধবার বিকালে ঢাকার শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ ও শ্রম অধিদপ্তর ত্রিপক্ষীয় সভায় বসে। সেখানেও কোনো সমাধান আসেনি।

দৈনিক ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত ৯ অগাস্ট থেকে টানা চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি করেন শ্রমিকরা। এরপর শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন, যা এখনও চলমান আছে।