‘কৃষি বাঁচাও কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শ্লোগানে বৃহস্পতিবার বগুড়ার আলাতাফুন্নেছা মাঠে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন হয়।
Published : 16 Feb 2023, 09:35 PM
বাংলাদেশের কৃষকের সংকট জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।
বৃহস্পতিবার বগুড়ায় বাংলাদেশ কৃষক সমিতির চতুর্দশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘কৃষি বাঁচাও কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শ্লোগানে বিকালে বগুড়ার আলাতাফুন্নেছা মাঠে দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন গাইবান্ধার বাগদাফার্ম ভূমি আন্দোলনের নেতা বিমল কিসকু।
বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন, কাস্তে, মাথাল নিয়ে সভাস্থলে সমবেত হয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে দুদিনের এই সম্মেলন শেষ হবে।
সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, কৃষকের সংকট আজ জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। দেশে আজ লুটেরা শ্রেণির রাজত্ব চলছে। যে অর্থনীতিতে দেশ পরিচালিত হচ্ছে সেই অর্থনীতি শোষণ করছে কৃষকদের। প্রতিটি গ্রামে গ্রামে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে। কৃষক তার ফসলের লাভজনক দাম পায় না।
নানামুখী সংকটে জর্জরিত এবং বৈষম্যের শিকার কৃষকদের মুক্ত করতে তীব্র গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশ আজ দুভাগে বিভক্ত। এ কদিকে মুষ্টিমেয় শোসক, অন্যদিকে আপামর জনগণ। প্রতিদিন রাষ্ট্রের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত ১১ বছরে ১১ লক্ষ কোটি টাকা পাচার পাচার হয়ে গেছে। এই টাকা সাধারণ জনগণের টাকা।”
বর্তমান বাজার ব্যবস্থা পুজিবাদী এবং এটি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে সেলিম বলেন, যারা লক্ষকোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিতে না পারলেও তাদের আবার ঋণ দেওয়া হয়। আর কৃষক পরিশোধ করতে না পারলে তাদের কোমড়ে দড়ি বাঁধতে হয়।
সরকার নানাভাবে জনগণকে ভাওতাবাজি করে; তাই এ থেকে মুক্ত হতে উৎপাদনের এবং ক্রেতার সমবায় গড়ে তোলার আহ্বান জানান এই সিপিবি নেতা।
দেশে আজ শত শত হাওয়া ভবন তৈরি হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বামপন্থিদের সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়েই এ লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।
কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর বলেন, “কৃষকের সংকটকে তুলে ধরতে এবং কৃষকদের বাঁচাতেই আমাদের এই লড়াই। কৃষি, কৃষককে বাঁচাতেই আমাদের এই সম্মেলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কৃষকের দাবিসমূহকে সামনে নিয়ে আসাই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।”
ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা বলেন, ১৪ বছরে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে; কিন্তু কৃষক ফসলের দাম পাচ্ছে না। এখন জনগণের বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে গেছে। কৃষক তার ধান, আলু রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। যারা অন্ন যোগায় তাদের কোনো মূল্য নেই। উন্নয়ন তাহলে কার জন্য?
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তেভাগা আন্দোলনের মতো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সম্মেলনে উত্থাপিত ১০ দফা দাবি হলো: ভূমিহীন কৃষকসহ প্রকৃত উৎপাদক কৃষককে কৃষি কার্ড প্রদান; ফসলের লাভজনক দাম; ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালু করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়; পর্যাপ্ত সংখ্যক খাদ্য গুদাম ও হিমাগার নির্মাণ; জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিতকরণ; সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের চাহিদামতো সার প্রদান; কৃষি উপকরণের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা; বিএডিসি সক্রিয় করা; কৃষক সমবায় বাজার ব্যবস্থা চালু করা; পল্লি রেশন ও শস্য বীমা চালু করা এবং ষাটোর্ধ্ব কৃষকদের পেনশন চালু করা।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম এ সবুরের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের পরিচালনায় সমাবেশে বহু বিদেশি অতিথিও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান নিমাই গাঙ্গুলী, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক আবিদ হোসেন, সিপিবির বগুড়া জেলার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ এবং বাংলাদেশ কৃষক সমিতি বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী শেখ বক্তব্য দেন।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতের সিপিআই নেতা ও সারা ভারত কৃষক সভার জাতীয় পরিষদ সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ কৃষক শাখার সম্পাদক তরিত কুমার চক্রবর্তী, এম.এল.পি.ডি. প্রতিনিধি ফার্মার্স অর্গানাইজেশন জার্মানির গার্ড জিটনার, নেপালের অল নেপাল পিপলস ফেডারেশন (এপিএফএ) সভাপতি ভৈরব রাজ রীগমি, ইনচার্জ পিজেন্টস উইমেন সংগঠন (এপিএফএ) এর সাবিত্রা ডাখাল রিগমী।
এ ছাড়া সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, শাহাদাৎ হোসেন, সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, মাহবুব আলম, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, রথিন চক্রবর্তী, সহিদুল্লাহ সবুজসহ ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।