মাদারীপুরে ধনিয়া ক্ষেতে ছত্রাক, ক্ষতির মুখে চাষি

তবে জেলার শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তা বললেন, ধনিয়া ক্ষেতে কোনো ধরনের ছত্রাকের আক্রমণের খবর তার জানা নেই।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2024, 09:09 AM
Updated : 19 Feb 2024, 09:09 AM

মাদারীপুরে বিভিন্ন এলাকায় ধনিয়া ক্ষেতে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এত ফসল নষ্ট হয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন ধনিয়া চাষিরা। 

মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, ক্ষতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তবে জেলার শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তা বললেন, ধনিয়া ক্ষেতে কোনো ধরনের ছত্রাকের আক্রমণের খবর তার জানা নেই। 

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বলাইরকান্দি গ্রামের ধনিয়া চাষি আবদুল গফুর মোল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, চলতি বছর ৫ বিঘা জমিতে মসলা জাতীয় ফসল ধনিয়া চাষ করেছেন।

তার ধনিয়া ক্ষেত যখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে, তখন হঠাৎ করে এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে গাছ মরতে শুরু করে।

বাজার থেকে বেশ কিছু ছত্রাকনাশক ওষুধ এনে ছিটিয়েও পাচ্ছেন না কোনো সুফল। এতে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

গফুর মোল্লা বলেন, “কিছু দিন আগে প্রচণ্ড শীত পড়ে। তাই এক সপ্তাহ ক্ষেতের দেখাশোনা করতে পারিনি। কিন্তু এখন এসে দেখি, ধনিয়া গাছের ডালপালা কুঁকড়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো গাছ সম্পূর্ণ মরেও গেছে।

“বাজার থেকে ওষুধ এনে স্প্রে করেছি। কিন্তু তাতে তেমন সুফল পাচ্ছি না।”

একই অবস্থা এ গ্রামের আরো কয়েকজন ধনিয়া চাষির।

অলিল গৌড়া নামে গ্রামের আরেক চাষি বলেন, “আমি দুই বিঘা জমিতে ধনিয়া চাষ করছি। এতে গত বছরের চেয়ে বেশি খরচ পড়েছে। ফসল তুলতে তুলতে বিঘা প্রতি এবছর ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে। এখন আবার ধনিয়া গাছ ভাইরাসে ধরে মরতেছে। আল্লাহ ভালো বলতে পারবে, কত টাকা এবার লোকসান গুনতে হবে।”

সামসু তালুকদার নামে আরেক ধনিয়া চাষি বলেন, “গত বছর আমার ক্ষেতে ভালো ধনিয়া হয়েছিল। তাই এবারও চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে ক্ষেতে ভাইরাস ধরছে। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।”

রুবেল হোসেন নামে আরেক চাষি বলেন, “আমাদের ক্ষেতে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষি অফিসের কোনো লোক আমাদের কাছে আসেনি। আপনারা সাংবাদিকরাই প্রথমে আসলেন। দেখেন কী অবস্থা হইছে ধনিয়া ক্ষেতের, এখন আমরা কী করবো বুঝতেছি না।”

একই সমস্যা জেলার শিবচর, রাজৈর কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধনিয়া ক্ষেতে দেখা যাচ্ছে। 

মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, “আমি ধনিয়া ক্ষেতগুলোতে গেছি। কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে একই জমিতে বার বার একই জাতের ফসল চাষ করা ঠিক না। এতে জমির ফসলের ক্ষতি হয়। তাই ফসল চাষের আগে মাটিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ দিয়ে মাটি তৈরি করে তারপর যদি ফসল বোনা হয়, তাহলে ফসলে ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে না।”

সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন ও দায়িত্বে কোনো অবহেলা করছেন না দাবি করে তিনি আরও বলেন, “তারপরও যেসব ধনিয়া ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পরবর্তীতে করণীয় জানাব।”

এ বিষয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, “মাদারীপুরের মাটি ও আবহাওয়া ধনিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণের খবর আমার জানা নেই; আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি। এসব ক্ষেতের খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে স্থানীয় জাতের ধনিয়া চাষ হয়েছে। যা থেকে হেক্টরপ্রতি ১.৪ টন ধনিয়া উৎপাদন হবে।