এবার মহা অষ্টমীর স্নানোৎসবে অন্তত দশ লাখ পূণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানান উদযাপন কমিটির সভাপতি।
Published : 29 Mar 2023, 08:39 PM
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমীর স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন লাখো পূণ্যার্থী৷
বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূণ্যতিথিতে পাপমোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্রে নদে স্নান করতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৮ মিনিটে অষ্টমী স্নানের তিথি শুরু হয়েছে৷ শেষ হবে বুধবার রাত ১০টা ৪৭ মিনিটে। এ সময়ের মধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আগত পূণ্যার্থীরা ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করবেন বলে জানান স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা৷
নদীপথে ট্রলারে করে বিক্রমপুর থেকে স্বামী, সন্তানসহ লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছেন প্রমিলা রানী শীল৷ তিনি বলেন, “আগেও অনেকবার এসেছি৷ অনেক তো পাপ করি৷ ভগবান যাতে সেই পাপ থেকে মুক্তি দেন, ভালো মতো খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারি সেই প্রার্থনাই করেছি৷ স্নানের পর মনে শান্তি লাগে৷”
পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে প্রথমবার পূণ্যস্নানে এসেছেন হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হেমানন্দ সরকার। তিনি বলেন, “দুইদিন আগেই বাইন্নাচং থেইকা আইছি৷ ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আছিলাম৷ সকালে লাঙ্গলবন্দ আইছি৷ রোগ-শোক, কত ঝামেলা আছে সেগুলো যাতে দূর হয়; তাই চাইছি ভগবানের কাছে৷”
স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে বসেছে মেলা৷ এ মেলায় হাতপাখা, ঢোল, রাঙতা, শিশুদের খেলনা, সন্দেশ, মিষ্টিসহ বাহারি খাবার বেচা-কেনা চলছে৷
ঘাটের পাশে ফুল, দুর্বা, আম্রপল্লব, কলা, তুলসি বিক্রির জন্য বসেছে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী৷ স্নানের জন্য ফুল, দুর্বা, আম্রপল্লব লাগে বলে জানান সুকুমার চন্দ্র দাস নামে এক বিক্রেতা৷ তিনি বলেন, ১০-২০ টাকায় এসব বিক্রি করা হয়।
সরোজ কুমার সাহা বলেন, “প্রতিবছর এই স্নানোৎসবে দেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসা লাখো মানুষ অংশ নেন। এবার অন্তত দশ লাখ পূণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে।
“এবার উৎসব ঘিরে ব্রহ্মপুত্র নদের ১৮টি স্নানঘাটের সংস্কার, কাপড় পরিবর্তনের কক্ষ ও অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ, পানীয় জল সরবরাহের সুব্যবস্থা ছিল৷ ঘাট এলাকায় নদের কচুরিপানা অপসারণেও উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ মঙ্গলবার রাতে তিথি শুরু হওয়ার পর থেকে পূণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নিতে শুরু করেন৷ বুধবার রাত পর্যন্ত থাকবে তিথি৷”
এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হয়নি৷ শান্তিপূর্ণভাবেই এ উৎসব শেষ হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন সরোজ সাহা৷
স্নানোৎসবকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক হাজার ২০০ সদস্য নিয়োজিত আছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল৷
তিনি বলেন, “তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে৷ পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও রয়েছে৷”
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, স্নানোৎসবের কারণে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়৷ যানজট নিরসনে কাজ চলছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এমনিতেই যানবাহনের চাপ থাকে৷ আজকে লাঙ্গলবন্দ স্নানকে ঘিরে পূণ্যার্থীদের আগমন প্রচুর৷ এ কারণে সড়কে যানবাহনের অত্যাধিক চাপ৷ যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের প্রায় ২০টি টিম মহাসড়কে কাজ করছে৷ পাশাপাশি জেলা পুলিশও যানজট নিরসনে কাজ করছে।”