“মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ১৫ বছর ধরে এমপি থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে উনার দূরত্ব ছিল।”
Published : 27 Nov 2023, 08:36 PM
হাওর অঞ্চল নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য নানা কর্মকাণ্ডে ‘বিতর্কিত’ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার।
তবে রতন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে সোমবার জানান তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) আব্দুর রাজ্জাক পাভেল।
রোববার আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, “নেত্রী সবার জন্য এবারের নির্বাচন উন্মুক্ত করেছেন। সেজন্য আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হব। ৩০ নভেম্বর ডিসির কাছে মনোনয়ন ফরম জমা দেব। ৭ জানুয়ারি ফলাফল পেয়ে যাবেন।”
তাহিরপুর-মধ্যনগর-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে সংসদ সদস্য রতনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদকে অভিযোগ দেওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
এ ছাড়া নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, জলমহাল ভোগ, পরিবেশবিনাশী কার্যক্রম করে যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলনে সহযোগিতার অভিযোগ উঠে। যদিও সংসদ সদস্য বারবার তা অস্বীকার করেছেন।
মধ্যনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ১৫ বছর ধরে এমপি থাকলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে উনার দূরত্ব ছিল। উনি জামায়াত-বিএনপি নিয়ে চলাচল করতেন। মাঠের জরিপেও উনার জনপ্রিয়তা ছিল না।
“এ ছাড়া উনি দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কাণ্ডে আলোচনায় আছেন। সব মিলিয়ে উনাকে নিয়ে নানা বির্তক ছিল। তাই দলের এই নতুন সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিস বলেন, “বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে তা সত্য। অনেক সময় কোনো ছোট ঘটনাও বড় আকারে প্রকাশ হয়।
“মানুষের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। (রোববার) বিকালে এমপির বাসায় উনার সঙ্গে দেখা হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। এ সময় এমপি বলেছেন, তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন।
তবে যিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তাকে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে হবে জানিয়ে শামীম বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, প্রার্থী পরিবর্তন হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে আছি। দলীয় প্রধান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা তৃণমুলের কর্মীরা সেভাবে চলব।”
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান বলেন, “বর্তমান এমপি কেন মনোনয়ন পাননি তা জানি না। তবে আমরা আওয়ামী লীগ করি, দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে তার সঙ্গেই আছি। নেত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা একমত।”
কাটা হচ্ছে যাদুকাটার পাড়, গ্রামগুলো হুমকিতে
তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জয়নাল আবেদীন ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আলী মর্তুজা বলেন, “নেত্রীর কাছে সব রিপোর্ট ছিল, সেই রিপোর্ট অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য সংগঠনের জন্য কোনো কিছু করেননি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। উনার দাম্ভিকতা ছিল। এবার যদি সত্যিই নির্বাচন করেন তাহলে বুঝতে পারেবন মাঠের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।”
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি নির্বাচনেই দলের প্রার্থিতা পরিবর্তন হয়। দলীয় প্রধান নতুন প্রার্থী দেন এবারও তাই হয়েছে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশ অনুয়ায়ী চলব।”