গাজীপুরে রনিকে কিছু না বললেও বরিশালে রুপনকে বিএনপির নোটিশ

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়া আরও ১৮ জনের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব চেয়েছে বিএনপি।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2023, 08:12 AM
Updated : 2 June 2023, 08:12 AM

দলের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১৯ প্রার্থীকে কারণ দর্শাতে বলেছে বিএনপি। 

তাদের মধ্যে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদের লড়াইয়ে থাকা বিএনপি পরিবারের সন্তান কামরুল আহসান রুপন, বাকিরা কাউন্সিলর প্রার্থী। 

কাউন্সিলর পদে যেসব প্রার্থীকে নোটিস দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন সাধারণ কাউন্সিল এবং তিনজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। 

মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা মো. জাহিদুর রহমান রিপন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামে পাঠানো চিঠিতে নোটিস পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনও বর্জনের ডাক দিয়েছে। বিএনপির এই অবস্থানের মধ্যেও নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের দুই জন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে লড়েন। কাউন্সিলর পদেও ভোট করেন আরও অনেকে। 

তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের পাঁচ মহানগর ভোটে বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় বা আলোচিত নেতা অংশ নেননি। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহনুর ইসলাম রনি গত ২৫ মের ভোটে অংশ নেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। বিএনপিতে তার কোনো পদ নেই। এ কারণ দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দল। 

আগামী ১২ জুন ভোট হতে যাওয়া বরিশালেও বিএনপি পরিবারের একজন মেয়র পদে ভোটে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। রনি সরকারের মত তারও কোনো পদ নেই। তিনি সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন। আর কাউন্সিলর পদে ভোটে লড়া বহু জন বিএনপির পদধারী নেতা বা কমিটির সদস্য।

গাজীপুরে রনিকে কিছু না বললেও রুপনকে ছাড় দিচ্ছে না বিএনপি।  

রুপনের বর্তমানে কোনো পদ না থাকলেও তিনি এক সময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ছিলেন। তার বাবা আহসান হাবীব কামাল ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের মেয়র শওকত হোসেন হীরনকে হারিয়ে মেয়র হয়েছিলেন। 

নোটিসে যা বলা হয়েছে 

বিএনপির নোটিসে বলা হয়েছে, “গত ১৫ বছর ধরে ‘অবৈধ সরকারের’ বিরুদ্ধে বিএনপিসহ দেশপ্রেমিক জনগণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ বছর ধরে কারাভোগ করছেন। হত্যা, নির্যাতনসহ বিএনপির ৫০ লাখ নেতা কর্মীদের ‘মিথ্যা অভিযোগে’ মামলা দিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। অনেক নেতা-কর্মী ‘গুম’ রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” 

এরপর দলের সদস্য হয়ে ‘ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করে’ সেই সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করায় কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। 

রুপন ছাড়াও আরও যাদেরকে নোটিশ 

৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাবিবুর রহমান টিপু, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হারুন অর রশিদ ও ১৯ নং ওয়ার্ডের শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন আছেন নোটিশ প্রাপ্তদের তালিকায়। তারা তিন জনই মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। 

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে নোটিশ পেয়েছেন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সেলিম হাওলাদার। 

সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়ে নোটিশ পেয়েছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের থেকে সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের রাশিদা পারভীন। তারা তিনজনও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। 

বিএনপির ওয়ার্ড ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যারা নোটিশ পেয়েছে, তারা হলেন: ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব জিয়াউল হক মাসুম, একই ওয়ার্ডের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আব্দুল্লাহ সাদি, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সৈয়দ হুমায়ন কবির লিংকু, ২২ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ। 

সাবেক পদধারীদের মধ্যে আছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জেলা তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শাহীন, একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সিনিয়র সভাপতি হাবিবুর রহমান ফারুক, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মহানগরের সাবেক সহসভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদউদ্দিন হাওলাদার এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন কবির। 

নোটিস পেয়ে কী বললেন তারা 

বিএনপির নোটিসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান ছেলে রুপন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে নোটিশ পেয়েছি। এখন গণসংযোগে ব্যস্ত। এ বিষয়ে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।” 

রুপন প্রার্থী হওয়ার পর মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেছিলেন, “তিনি বিএনপির কেউ নন।”

Also Read: বরিশালে ‘বিএনপি প্রার্থীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে তালিকা

Also Read: বরিশাল সিটি ভোট: বহিষ্কারের খড়গ নিয়েও নির্বাচনে বিএনপির ১৭ জন

নোটিস পাওয়া ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী জাবের আব্দুল্লাহ সাদি বলেন, “আমার তো দলে কোনো পদ নেই। এখন কি তাহলে সমর্থক পদ থেকে বহিষ্কার করবে?” 

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৯ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ প্রার্থী লড়াই করছেন।

মেয়র পদে আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রুপনও আছেন। তার সঙ্গে লড়াই হবে নৌকা নিয়ে লড়া আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ফয়জুল করিম হাতপাখা নিয়ে লড়ছেন। তিনিও আছেন আলোচনায়।

এই নির্বাচনে মোট প্রার্থী ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। ২০১৮ সালে নৌকা নিয়ে জয়ী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।