থমকে আছে উয়ারি-বটেশ্বরের গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘরের কাজ

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত; প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও বাড়ানো হয়নি বাজেট।

আসাদুজ্জামান রিপনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 03:35 AM
Updated : 17 May 2023, 03:35 AM

এক বছরের মেয়াদ হলেও গত তিন বছরে প্রকল্পের সময় বেড়েছে চারবার; এখন অর্থাভাবে থমকে আছে নরসিংদীর আড়াই হাজার বছরের পুরনো প্রত্ননগরী উয়ারী-বটেশ্বরের ‘গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর’ স্থাপনের কাজ। 

মূলত ২০০০ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়, বের হয়ে আসতে থাকে নানা নিদর্শন। এসব নিদর্শন প্রদর্শনের জন্য ‘গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৯ সাল থেকে জাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে জেলা পরিষদ।  

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও বাড়ানো হয়নি বাজেট। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

সরজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরটির তিনতলা ভবনের মধ্যে দুইতলা পর্যন্ত কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আশপাশে ইট-সুড়কি ছড়িয়ে থাকলেও কাজের আর অগ্রগতি নেই। 

জানা গেছে, ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান প্রথম এই প্রত্নস্থানটি সবার গোচরে আনেন। এরপর ২০০০ সালে ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় উয়ারি-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়। 

পর্যায়ক্রমে খননকাজের মাধ্যমে পাওয়া যায় প্রাচীন রৌপ্য মুদ্রা, বাটখারা, লৌহ কুঠার, বল্লম, পোড়ামাটির কিন্নর, অসংখ্য কাচের পুঁতিসহ নানা ধরনের বস্তু। 

এসব প্রত্নসামগ্রীর অল্পকিছু হানিফ পাঠানের ছেলে স্কুল শিক্ষক হাবিবুল্লাহ পাঠানের ব্যক্তিগত পাঠাগারে সংরক্ষণ করা হয়। স্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা না থাকায় বেশ কয়েকটি স্থান খননের পর অনেক প্রত্ন নিদর্শন আবারও মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। 

এসব প্রত্নবস্তুর স্থায়ী সংরক্ষণের পাশাপাশি দর্শনাথীদের জন্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে ২০১৯ সালে ৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হয় ‘গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘর, উয়ারি-বটেশ্বর’ প্রকল্পের কাজ। 

নরসিংদী জেলা পরিষদের অধীনে রিনা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় শুরু হওয়া তিনতলা বিশিষ্ট এ প্রকল্পের কাজ। তিন বছরে চার দফায় মেয়াদ বাড়ানো হলেও বাজেট না বাড়ায় থমকে আছে প্রকল্পের অগ্রগতি। 

নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা মিয়া বলেন, “নতুন প্রজন্ম উয়ারি-বটেশ্বর সম্পর্কে বইপত্র পড়ে জানতে পারছে। কিন্তু বাস্তবে এখানে এসে তারা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দেখতে পারছে না। অথচ এই স্থানকে ঘিরে বড় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে।” 

ঐতিহ্য অন্বেষণের পরিচালক মাহাবুবুল আলম বলেন, “২০০০ সাল থেকে এখানে পর্যায়ক্রমে খনন কাজ চলছে। এই পর্যন্ত ২১ বারের উৎখননে অসংখ্য প্রত্নবস্তুসহ স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। এসব নিদর্শন পাওয়ার পর আবার অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত সেভাবেই রাখা হবে।” 

আড়াই হাজার বছর আগের নগর সভ্যতার এসব নিদর্শন মাটিচাপা থাকায় পর্যটকরা দেখতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এসব প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যেত। 

নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার। প্রথম দিকে জাদুঘরটির ড্রয়িং ডিজাইন ও অর্থ বরাদ্দে কিছু সমস্যা ছিল, যার কারণে কাজটি শুরু করতেই দেরি হয়।” 

তিনি আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়া কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ কাজ শেষ হবে।”   

এ বিষয়ে রিনা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী তপন কুমার পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিডের পর থেকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। তাই প্রকল্পের বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।” 

উয়ারি-বটেশ্বরকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে বলে জানান নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান। 

তিনি বলেন, “গঙ্গাঋদ্ধি জাদুঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হলে পাশাপাশি আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করা হয়েছে, সেখান থেকেও হয়তো কিছু বরাদ্দ আসবে। উয়ারি-বটেশ্বরকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে সরকারও রাজস্ব পাবে।”