সড়কে ইজিবাইক: বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ২ জেলায় ঝরল ১২ প্রাণ

যশোরে বাসের নিচে চাপা পড়ে ইজিবাইক; নিহত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই একই পরিবারের। সিলেটে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ যায় পাঁচ জনের।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সড়কে যেন মৃত্যুর মিছিল তৈরি হয়েছিল; পৃথক দুর্ঘটনায় তিন জেলায় প্রাণ গেছে ১৭ জনের। এরমধ্যে দুই জেলায় ইজিবাইকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ১২ জন।

শুক্রবার রাতে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে যশোর সদরের লেবুতলা বাজারে। মাগুরাগামী একটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে যায়; এরপর উল্টে ইজিবাইকের ওপর পড়ে। এতে নিহত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনই একই পরিবারের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুইজন।

অপরদিকে সিলেট-তামাবিল সড়কে জৈন্তাপুর উপজেলায় বাস ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া টাঙ্গাইলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে তিনজন, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়।

যশোরে বাসের নিচে ইজিবাইক, নিহত সাতজনের ৫ জনই একই পরিবারের

শুক্রবার সদর উপজেলার লেবুতলা বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে বারোবাজার হাইওয়ে ফাঁড়ির এসআই মিজানুর রহমান জানান।

নিহতরা হলেন- যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামের হেলাল উদ্দিনের দুই জমজ ছেলে হাসান (২) ও হোসেন (২), হেলাল উদ্দিনের মা মাহিমা খাতুন (৬৫), ভাবি রাহিমা খাতুন (৩৫), রাহিমার মেয়ে জেবা (৭), সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭) ও ইজিবাইক চালক আবু মুসা (৩৫)।

আহতরা হলেন- নিহত জমজ দুই শিশুর মা সোনিয়া বেগম (৪৫) ও সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের নয়ন হোসেন (৩৫)। তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

লেবুতলা বাজারের প্রত্যক্ষদর্শী বিল্লাল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় লেবুতলা বাজারে যশোর থেকে মাগুরাগামী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে পড়ে। ওই সময় বাসটি ইজিবাইককে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত হন; হাসপাতালে নেওয়ার পর একজন মারা যান।

যশোরে বাসের নিচে ইজিবাইক, নিহত ৭

সিলেটে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে নিহত ৫

টাঙ্গাইলে সড়কে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত ৫

ফায়ার সার্ভিস আহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনালের হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে বলে এসআই মিজানুর রহমান জানান।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, বেপরোয়া গতির বাস সামনে থাকা ইজিবাইকের উপর উঠে যায়। এ সময় আরোহীসহ ইজিবাইকটি বাসের নিচে চাপা পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে চারজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজনের মৃত্যু হয়।

 চালক ও তার সহকারী বাস রেখে পালিয়ে গেছেন; তাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান বেলাল হোসাইন।

সিলেটে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে নিহত ৫

সিলেট-তামাবিল সড়কে দরবস্ত এলাকায় শুক্রবার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে তামাবিল হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কাসেম জানান।

নিহতরা হলেন বড়খলা গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে মুসদ আলী (৫০), শ্রীখেল গ্রামের মোজাম্মেল আলীর ছেলে নূর উদ্দিন (৫৫), বারগাতি গ্রামের আব্দুল বারীর ছেলে আব্দুল লতিফ (৫০), ফরফরা গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে মো. কামাল (২৫) ও দিঘীরপাড় গ্রামের মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মতিন ওরফে কাছাই (৪৫)।

আবুল কাসেম জানান, যাত্রী বোঝাই একটি বাস সিলেট থেকে জাফলংয়ের দিকে যাচ্ছিল। রাত ১০টার দিকে দরবস্ত এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের সামনে বিপরীতমুখী একটি ইজিবাইককে ধাক্কা দেয় বাসটি। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করেছে।

আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

পৃথক দুর্ঘটনায় টাঙ্গাইলে নিহত ৫

টাঙ্গাইলে তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। 

শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে রাবনায় কভার্ডভ্যান ও পিক-আপ ভ্যানের সংঘর্ষে তিনজন, বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ আতিকুল ইসলাম এ তথ্য জানান। 

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন জেলার গোপালপুর উপজেলার হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম (৪০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫), নুরজাহান (৪৫) ও ফারজানা (৩)।

এদের মধ্যে প্রথম তিনজন পিক-আপ ভ্যানের যাত্রী; আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় শিশু ফারজানা। সে বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের নেধার পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাদলের মেয়ে।

নিহত আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের বরাতে আতিকুল ইসলাম জানান, বিকালে সিরাজগঞ্জ থেকে একটি পিক-আপ ভ্যানযোগে প্রায় ২০ জন ঢাকায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পিক-আপ ভ্যানটি ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে একই দিক থেকে আসা একটি কভার্ডভ্যান তাদের গাড়িটির পেছনে ধাক্কা দেয়।

“এতে পিক-আপ ভ্যানে থাকা অন্তত ১৫ জন যাত্রী আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।”

একই মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় বাস চাপায় এক নারী নিহত হন বলেও আতিকুল ইসলাম জানান।

এছাড়া বাসাইলে মোটরসাইকলে চাপায় এক শিশু মারা গেছে।

বাসাইল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশুটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় একটি মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।