পাখি সংরক্ষণের জন্য গণসচেতনতা তৈরির উদ্দেশে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা।
Published : 13 Jan 2023, 05:56 PM
পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাখি মেলা-২০২৩।
আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন।
২১ তম বারের এই মেলার আয়োজক হিসেবে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। সহ-আয়োজক হিসেবে থাকবে ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, আরণ্যক ফাউন্ডেশন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতি, আইইউসিএন এবং বাংলাদেশ বন বিভাগ।
অধ্যাপক মনিরুল বলেন, “এ বছর মেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা থাকবে। তার মধ্যে- আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলারস দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্র-পত্রিকা প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা।”
এছাড়া বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড, সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড ও কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নিয়মাবলি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটি দলে চারজন শিক্ষার্থী থাকবে এবং দলের সাথে একজন বিচারক অংশগ্রহণ করবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্ধারিত এক ঘণ্টা হেঁটে পাখি দেখে বা পাখির ডাক শুনে সঠিক নাম লিখতে হবে। অংশগ্রহণকারীদের নাম মেলার পূর্বে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে অথবা মেলার দিন প্রতিযোগিতা শুরুর আগে জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গনে সকাল ৭টা ৪৫মিনিটের মধ্যে নিবন্ধন করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। দুটি গ্রুপ থাকবে, ‘ক’ গ্রুপ: নার্সারি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ‘খ’ গ্রুপ: তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি। প্রতিযোগীদের মেলার দিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নাম নিবন্ধন করতে হবে এবং প্রত্যেকের নিজ নিজ স্কুলের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীসহ সকলে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতায় (অডিও-ভিডিও) ভিডিও দেখে ও ডাক শুনে পাখির নাম বলতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুটি দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। প্রতিটি দলে দু’জন শিক্ষার্থী থাকবে। মেলার দিন সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে নাম নিবন্ধন করতে হবে।
বিগ বার্ড বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড : বাংলাদেশের পাখির ওপর যে কোনও পর্যবেক্ষণ (পাখির নতুন প্রজাতি/ বিপন্ন ও বিরল প্রজাতির সন্ধান/ পাখির ওপর যে কোনও চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ) পর্যালোচনা করে তিনজনকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে।
পর্যবেক্ষণের স্বপক্ষে ছবি, ভিডিও বা যে কোনও তথ্য প্রমাণ বিগ বার্ড বাংলাদেশ অথবা আহ্বায়ক, পাখি মেলা আয়োজক কমিটি-২০২৩, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার ঢাকা-১৩৪২ এই ঠিকানায় আগামী ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩-এর মধ্যে পাঠাতে হবে।
কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড: ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে পাখি তথা জীববৈচিত্র প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে (প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে একজন করে) এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। প্রকাশিত সংবাদ/ সংবাদের লিংক [email protected] এই ঠিকানায় পাঠাতে হবে আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে।
সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড: ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের পাখির ওপর সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে একজনকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। প্রকাশিত প্রবন্ধ [email protected] এই ঠিকানায় অথবা আহ্বায়ক, পাখিমেলা আয়োজক কমিটি-২০২৩, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা-১৩৪২ এই ঠিকানায় আগামী ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩-এর মধ্যে পাঠাতে হবে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম প্রদর্শনের জন্য জহির রায়হান মিলনায়তন প্রাঙ্গণে একটি স্টল দেওয়া হবে। পত্র-পত্রিকা, প্রকাশনা, ছবি ইত্যাদি দিয়ে স্টল সাজানো যাবে। বিচারকদের রায়ে সেরা তিনটি স্টলকে পুরস্কৃত করা হবে। এই স্টল সাজানোর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক হলে আগামী ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখের মধ্যে মেলার আহ্বায়ককে জানাতে হবে।
আয়োজক কমিটির সদস্য অধ্যাপক কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাখি মেলার উদ্দেশ্য হচ্ছে পাখি সংরক্ষণের জন্য গণসচেতনতা তৈরি করা। এই সচেতনতা শুধু ক্যাম্পাস না, সারা দেশেই ছড়িয়ে দিতে চাই।
“শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ করে জীববৈচিত্র্য বা পাখি বাঁচানো সম্ভব না। সবাই যদি সচেতন হয় তাহলে পাখির অবৈধ শিকার, বিক্রি ইত্যাদি জনগণই সেটা রক্ষা করবে, আইনের আশ্রয় নিবে। তাহলেই পাখি বা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত থাকবে।”
প্রতিবছরের শীতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিরা বিচরণ করে। এ বছরের শুরুতে সেটা দেখা গেলেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো ঘেষে যে দোকানগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলে লেক থেকে পাখি চলে যাবে না। দোকানগুলো কেন্দ্র করে মানুষজনের ভিড় পাখিদের বিরক্তির কারণ হয়।
“কারণ পাখিরা নিরিবিলি জায়গাটা চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকেউ সেন্টারের ভিতরের লেকে ঠিকই পাখি বিচরণ করছে, সেখানের নিরিবিলি জায়গা তাদের পছন্দ।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে কী না জানতে চাইলে এই পাখি গবেষক বলেন, “কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার চিঠি দিয়েছি কিন্তু সেটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।”
২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলা শুরু করেছিলো ‘বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব’। ২০০৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সরাসরি সম্পৃক্ত হয়। এর মধ্যে ২০১১ সাল এবং ২০২১ সালে পাখি মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর ২১তম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো লিজ দেওয়ার কারণে পাখি বসেনি, যার ফলে সে বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ২০২১ সালে কোভিডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি।