২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আওয়ামী লীগের এ নেতা।
Published : 27 Jan 2024, 06:13 PM
১৯ বছর কেটে গেলেও অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার বিচার হয়নি; ‘হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের’ দাবি জানিয়েছে তার পরিবার।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা কিবরিয়াকে। সেদিনের হামলায় প্রাণ হারান কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদাসহ আরও তিনজন।
পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়।
১৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগে শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া বলেন, “শেখ হাসিনার দেশে যে কোনো আইনের শাসন নেই এটিই প্রমাণ হয়, এতদিনে একটি সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি ও বিচার হয়নি। এ মামলায় বিএনপির কিছু নিরীহ লোককে জড়িত করা হয়েছে। অনেকে মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
“তাদেরকে অন্যায়ভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আসল খুনিরা এখনও হবিগঞ্জে আছে, ক্ষমতায় আছে। প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্টপোষকতায় তারা খুব ভালোই আছে। কার দোষ এবং কীভাবে হয়েছে হবিগঞ্জের মানুষ মোটামুটি সবাই জানে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিচার হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে বিচার পাওয়ার আশা আমরা করি না। এ রকম শত শত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার মানুষ পাচ্ছে না। তবে একদিন পাবে।
“আর তখন, যারা প্রকৃত খুনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই আশাবাদ করছি”, বলেন রেজা কিবরিয়া।
কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার বিলম্ব হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন মামলার বাদী সাবেক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খান।
আসামিরা বিভিন্ন কারাগারে থাকা এবং আদালতে সাক্ষীরা যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় বিচার বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান সিলেট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) সারোয়ার আহমেদ আব্দাল।
তিনি বলেন, সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলার বিচার চলছে। উভয় মামলায় ১৭৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিরা উপস্থিত না হওয়ায় দিনের পর দিন তারিখ পড়ছে। কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
এদিকে কিবরিয়ার মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে হবিগঞ্জে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহরের বৈদ্যের বাজারে কিবরিয়ার স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। কিবরিয়া স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন এ কর্মসূচি পালন করে।
শাহ এ এম এস কিবরিয়া কর্মজীবনে পররাষ্ট্র সচিব, এসকাপের নির্বাহী সচিবসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
২০০১ সালে কিবরিয়া হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকালে সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী আওয়ামী লীগের এক জনসভায় যোগ দেন কিবরিয়া। বক্তব্য শেষে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে সহকর্মীদের নিয়ে বৈদ্যের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেইটে সামনে গেলে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়।
আর্জেস গ্রেনেডের আঘাতে অনেকেই ক্ষত-বিক্ষত হন। কিবরিয়া গুরুতর আহত হলে ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। ঘটনাস্থলে মারা যান তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা ও এলাকার তিনজন। আহত হন আরও ৭০ জন।
পরদিন ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।