নীলফামারীতে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ

অভিযানে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2023, 01:18 PM
Updated : 10 Feb 2023, 01:18 PM

চলতি আমন মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে নীলফামারী জেলায় কৃষকদের কাছ থেকে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।  

সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে হাট-বাজারে ধানের মূল্য বেশি পাওয়ায় আমন মৌসুমে কোনো কৃষক খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আসেননি বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর- রশিদ।

তবে সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনের দিন থেকে বুধবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ধান সংগ্রহ শূন্যের কোঠায় থাকলেও চাল সংগ্রহের অভিযানে খাদ্য বিভাগ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান তিনি।

নীলফামারী জেলা খাদ্য বিভাগ জানায়, এবারের আমন মৌসুমে জেলায় সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় গেল বছরের ১৭ নভেম্বর। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

 ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার ৭৬ টন। ২৮ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এই ধান সংগ্রহ করতে হবে।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ৫১৫ টন, সৈয়দপুরে ৪৪১ টন, ডোমারে ৯৯০ টন, জলঢাকায় ৬৯২ টন, ডিমলায় এক হাজার ৯৮ টন, কিশোরগঞ্জে ৮০০ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

ধান সংগ্রহ অভিযানের প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও এসব উপজেলায় এক ছটাক ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। অবশিষ্ট কয়েক দিনেও ধান সংগ্রহের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে জানায় খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।

 অপরদিকে জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে নয় হাজার ১১৮ টন। এর মধ্যে জেলায় বুধবার পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮২ ভাগ। এ অর্জনের মধ্যে রয়েছে সদরে ৮৬ ভাগ, সৈয়দপুরে ৮৭ ভাগ, ডোমারে ৮১ ভাগ, জলঢাকায় ৭৩ ভাগ, ডিমলায় ৩২ ভাগ, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১০০ ভাগ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

 জেলায় চালকল রয়েছে ২৮৯টি। এর মধ্যে চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ২৭৯ জন কল মালিক। চুক্তিবদ্ধ ওই এর মধ্যে ২১টি অটো চাল কল এবং বাকি ২৫৮টি হাসকিং চাল কল।

নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের কৃষক স্বাধীন চৌধুরী এবার আমন মৌসুমে ছয় বিঘা জমিতে ধান আবাদ করে ফলন পেয়েছেন ৭২ মণ। ফসল ঘরে তোলার সময় হাট-বাজারে দাম বেশি থাকায় ওই ধান বিক্রি করতে তাকে সরকারি খাদ্য দপ্তরের মুখাপেক্ষী হতে হয়নি। সরকারি দরের চেয়ে বেশি দামেই ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা কেজি দরে ক্রয় করছে সরকার। অথচ আমি ২৮ দশমিক ৭৫ টাকা দরে প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) ধান দুই হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি। আমরা কৃষকরা যেখানে বেশি দাম পাবো সেখানেই বিক্রি করবো এটাই স্বাভাবিক।”

জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর বেরুবন্দ গ্রামের কৃষক মন্টু চন্দ্র রায় বলেন, “সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তাতে আমাদের লসের পাশাপাশি অনেক ঝামেলাও হয়। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকানো না হলে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করে না সরকারি খাদ্য গুদাম। এরপর গুদামে ধান পৌঁছাতে গুণতে হয় পরিবহন খরচ।

“কিন্তু ব্যবসায়ারীরা মাড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের বাড়ি থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে নগদ টাকায় ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমাদের ধান বেশি শুকানোর প্রয়োজন হয় না, তেমনি পরিবহন খরচও গুণতে হয় না।”

এসব কারণে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান সরবরাহে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ নেই বলে জানান এই চাষি।

এ বিষয়ে একই উপজেলার মীরগঞ্জ হাটের ধান ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন জাতের ধান প্রতি বস্তা (৮০ কেজি) দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৩২০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীরা। গড়ে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ২৯ টাকা।

এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান ক্রয় করছেন। এতে করে কৃষকদের সাশ্রয় হচ্ছে পরিবহন খরচ। ধান মাড়াইয়ের সঙ্গে বিক্রি করতে পারায় ধান রাখা এবং শুকানোর কোনো ঝামেলা থাকে না কৃষকদের। ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন বলে জানান এই ধান ব্যবসায়ী।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর- রশিদ বলেন, “ধান সংগ্রহ করা হয় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে। এ ক্ষেত্রে খাদ্য গুদামে কৃষদের ধান সরবরাহে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।”

“তবে মিল মালিকদের সঙ্গে চাল সরবরাহে চুক্তি থাকায় সরবরাহে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে বুধবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৮২ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে।”

অবশিষ্ট চালও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংগ্রহের আশা প্রকাশ করেন তিনি।