তেলবাহী জাহাজ ডুবি: চতুর্থ দিনে এসে উদ্ধার কাজ শুরু, গতি ধীর

ঘন কুয়াশা ও স্রোতের কারণে কাজ চলছে ধীর গতিতে।

ভোলা প্রতিনিধিবরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2022, 11:52 AM
Updated : 28 Dec 2022, 11:52 AM

১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে অন্য একটি বাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে ভোলার মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারে অবশেষে কাজ শুরু হয়েছে; তবে প্রতিকূল পরিবেশে তার গতি খুব শ্লথ।  

‘সাগর নন্দিনী-২’ ডুবে যাওয়ার চতুর্থ দিনে, বুধবার সকাল থেকে সেটি উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। যদিও ঘন কুয়াশা আর জোয়ার-ভাটার স্রোতের সমস্যার কারণে কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

রোববার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে ডুবে যাওয়া জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। এই তেল চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে পদ্মার ডিপোতে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম আসিফ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রচন্ড শীতের মধ্যে সকাল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় কাজ শুরু হলেও মূল কাজ শুরু করতে করতে সাড়ে ১১টা বেজে যায়।

“এখানে ডুবে যাওয়া জাহাজটি দুই পাশে দুটি পন্টুন আনা হয়েছে। এই দুটি পন্টুনের মাধ্যমে জাহাজটিকে ভাসানোর চেষ্টা করা হবে। তার আগে ডুবুরিরা ডুবে যাওয়া জাহাজটির তেলের ট্যাংকারে ওয়্যারহেড বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাসের চেষ্টা করবেন। খালাস হওয়া তেল অন্য জাহাজে নিয়ে যাওয়া হবে। এতে জাহাজটি হালকা হবে এবং তারপর সেটিকে ভাসানো সহজ হবে।”

তেলবাহী জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পরদিন সোমবার থেকে সেটি উদ্ধারের কাজ শুরু করার কথা ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। কিন্তু জাহাজ উদ্ধারে সক্ষম কোনো উদ্ধারকারী জাহাজ নেই বিআইডব্লিউটিএর।

পরে বেসরকারি উদ্যোগে জাহাজটি উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয় ‘সাগর নন্দিনী-২’ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তারা চেষ্টা করেও গত তিন দিনের উদ্ধার করা শুরু করতে পারেনি। তবে এ ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। আর জাহাজটির নিরাপত্তার কাজ করছে কোস্ট গার্ড।

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) মো. শাজাহান বলেন, “উদ্ধার কাজে বিভিন্ন সংস্থার ৫০ সদস্যের একটি টিম অংশ নিয়েছে।

“প্রাথমিক অবস্থায় ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ঘন কুয়াশা এবং স্রোতের কারণে কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে দ্রুত উদ্ধার কাজ সমাপ্ত হবে।”

তবে কখন উদ্ধার কাজ শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

এদিকে কোস্ট গার্ডের দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শফিউল কিঞ্জল জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটি উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর দুটি টাগ বোট ও বার্জ জহুর কোস্ট গার্ডের ডুবুরি দলের সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে।

উদ্ধার কাজের জন্য অন্য একটি বার্জ হুমায়রা বিকাল ৫টায় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের দুইটি দল সেখানে সার্বক্ষণিক সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।

ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে তেল যাতে ব্যাপকহারে নদীতে ছড়িয়ে যেতে না পারে সেজন্য কোস্ট গার্ড কাজ করছে জানিয়ে মিডিয়া কর্মকর্তা কে এম শফিউল কিঞ্জল বলেন, “সাগর নন্দিনী-২ এর নির্গত তেল যেন পানিতে মিশে পরিবেশ দূষণ করতে না পারে সেজন্য চতুর্থ দিনের মতো বুধবার সকাল ৯টা থেকে ল্যামর সংযোজিত অত্যাধুনিক বোটের সাহায্যে পানি হতে তেল অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে।“

শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল লোড করে জাহাজটি চাঁদপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার কথা ছিল। রোববার ভোরে ঘন কুয়াশার মধ্যে তোলাতুলির কাঠিরমাথা এলাকায় বালুবাহী একটি বলগেটের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয়। এতে জাহাজটি তলা ফেটে পানি ঢুকতে থাকে এবং একপর্যায়ে সেটি ডুবে যায়।

জাহাজে মোট ১৩ জন স্টাফ ছিলেন। পরে তাদের চিৎকার শুনে অন্য একটি বলগেট এসে তাদের উদ্ধার করে। জাহাজের স্টাফরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় জেলেরা এসে জাহাজের তেল সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। কিছু তেল মেঘনায় ছড়িয়েও পড়ে। এতে নদীর দূষণ বাড়ছে, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তেল সাগরে চলে যেতে পারে বলে পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছে।

জাহাজটির তেলের মালিক পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজে ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন ছিলো। এর মধ্যে ডিজেল আট লাখ ৯৮ হাজার লিটার এবং দুই লাখ ৩৪ হাজার লিটার অকটেন ছিলো। যার বাজার মূল্য নয় কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন:

Also Read: জ্বালানি তেল নিয়ে মেঘনায় ডোবা জাহাজ উদ্ধারে বিলম্ব

Also Read: ভোলায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে ডুবল জাহাজ, ছড়াচ্ছে মেঘনায়

Also Read: ১১ লাখ লিটার তেল নিয়ে মেঘনায় ডোবা জাহাজের উদ্ধার কাজ সোমবার

Also Read: দুদিনেও উদ্ধার কাজ শুরু হয়নি তেল নিয়ে ডোবা জাহাজের