“আমাদের ক্লাসের সিলিং ভাঙা, চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে; একটু বৃষ্টি হলেই ক্লাসরুমের মেঝেতে পানি জমে যায়।”
Published : 06 Aug 2023, 10:47 PM
ফেনীর পরশুরাম সরকারি পাইলট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কক্ষে ঢুকলে চমকে উঠতে হয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের দুই হাত ব্যস্ত থাকার কথা বইয়ের পাতা ওল্টানো বা ক্লাসনোট লিখতে; সেখানে এক হাতে ছাতা মাথায় ধরে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের।
কারণ অষ্টম শ্রেণির জন্য বরাদ্দ শ্রেণিকক্ষটির অবস্থান পুরনো আধা-পাকা টিনশেডে। সেই টিনের চালে ছিদ্র হয়ে বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায় শিক্ষার্থীদের বই-খাতা-পোশাক।
তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাস করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
ক্লাসটির শিক্ষার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবেই ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। কখনও বইখাতা বাঁচাতে সাহায্য নিতে হচ্ছে ছাতার, কখনও মাথায় বাঁধতে হচ্ছে পলিথিন।
এই শিক্ষার্থী বলে, “আমাদের ক্লাসের সিলিং ভাঙা, চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। একটু বৃষ্টি হলেই ক্লাসরুমের মেঝেতে পানি জমে যায়। আমরা অনেক কষ্ট করে ক্লাস করি।”
আরেক শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলল, এই সংকট চলমান থাকলে বর্ষা মৌসুমে এভাবেই হয়ত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে তাদের।
একাধিক শিক্ষক জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই এই জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনটিতে পাঠদান করতে হচ্ছে। বছরের অন্য সময় সমস্যা না হলেও বর্ষায় বিপাকে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। পাঠদান অব্যাহত রাখার স্বার্থেই মাথায় ছাতা ধরে হলেও ক্লাস নিতে হয়।
শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংকটকেই এ সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান চৌধুরী আসিফ।
তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই। নতুন একটি ভবন থাকলেও ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। নীচ তলায় শুধুমাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষ। বাধ্য হয়েই পুরনো টিনশেড ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে নিতে হচ্ছে। বইখাতাসহ পোশাক ভিজে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে এসে ক্লাস করছে।”
একাধিকবার টিনশেড সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও কোনো সাড়া পাননি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম তালুকদার বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। টিনশেড মেরামত করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। বর্ষা শুরুর আগেই পুরনো টিন বদলে মেরামত করে দিলে শিক্ষার্থীদের ছাতা মাতায় দিয়ে শ্রেণিকক্ষে বসতে হত না।”
সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন, এমনটাই জানালেন পরশুরামের ইউএনও সৈয়দা শামসাদ বেগম।
তিনি বলেন, “উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলেছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”