চিকিৎসার অবহেলার অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Published : 19 Oct 2022, 11:05 PM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের এক আবাসিক ছাত্রের ‘উপর থেকে পড়ে’ মৃত্যুর পর তার চিকিৎসায় 'অবহেলায়' অভিযোগ এনে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন সহপাঠীরা।
বুধবার রাত ৯টার দিকে এমজিএম শাহরিয়ার নামে মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে মারা গেছেন বলে জানান হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসরা।
এরপর আহত শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) নিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা হয়। এতে অন্তত তিনজন গুরুতরসহ মোট পাঁচজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
পরে চিকিৎসায় অবহেলায় দায়ী ব্যক্তি এবং তাদের উপর হামলায় দোষীদের শাস্তি দাবি করে তারা মধ্যরাতে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয়।
আনুমানিক রাত ৮টার দিকে হলের উপর থেকে পড়ে যাওয়ার পর গুরুতর আহত শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে রাত ৯টার দিকে ৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আসাবুল হক।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, রাত ৮টার দিকে নিচে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পান তারা। ঘটনাস্থলে গিয়ে শাহরিয়ারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের কেউ কেউ হলের ছাদ থেকে তিনি নিচে পড়ে গেছেন বলে জানান।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আসাবুল হক বলেন, “যতদূর জেনেছি, নিহত শিক্ষার্থী হলের তৃতীয় তলার রেলিংয়ে বসে ছিলেন। এক পর্যায়ে অন্যমনস্ক হয়ে নিচে কংক্রিটের ঢালাইয়ের ওপর পড়ে যায়। এতে তার নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।“
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে এটি হত্যা, আত্মহত্যা না কি দুর্ঘটনা আমরা এখনও নিশ্চিত না। সিসিটিভির ফুটেজ দেখার পরে বিষয়টি জানতে পারব।'
নিহত শাহরিয়ার শহীদ হবিবুর রহমান হলের ৩৫৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়।
এদিকে হাসপাতালের সামনে রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, গুরুতর অবস্থায় শাহরিয়ারকে হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরতরা তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ উপাচার্যের স্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে বসে।
এছাড়া তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু না করে বিভিন্ন নিয়ম মানতে বাধ্য করা হয়। এতে করে কালক্ষেপণ হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
তার মৃত্যুর খবর জানার পর শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের গেইটসহ ওয়ার্ডে ভাঙচুর চলায়। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
বিক্ষুবদ্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই চিকিৎসককেও অবরুদ্ধ করে রাখে বলে নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান।
খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন,❝এই মুহূর্তে সব বিষয় সমাধান করা সম্ভব না। কেননা একজন মারা গেছে, সেটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যদের মধ্যে মারামারির বিষয়টি।
❝এখন সবার মাথা গরম। তাই পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। সব কিছু শান্ত হোক তারপর কে কাকে মারধর করেছে সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।❞