নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শিক্ষকসহ আহত ২০, তদন্তে কমিটি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন এলাকায় একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে বিরোধের শুরু হয়।

নোয়াখালী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2023, 10:43 AM
Updated : 23 March 2023, 10:43 AM

সিনিয়র-জুনিয়র বিরোধের জের ধরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় সংঘর্ষ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে শিক্ষকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। 

বুধবার দুপুর থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কয়েক দফায় চলা এই সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইকবাল হোসেন সুমন।

একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিনিকেতন এলাকায় একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে একাধিক শিক্ষার্থীর মাঝে কথাকাটাকাটি হয়। 

ওই ঘটনার জের ধরে দুপুর আড়াইটার দিকে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বেধে যায়। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে নুহাশের গ্রুপের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম নাঈম গ্রুপের মাইনুল নামের এক ছাত্রকে মারধর করে জখম করে। 

এই হামলার ঘটনার জের ধরে বিকাল থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। 

এর পর বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উভয়পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলায় জড়িয়ে পড়ে নুহাশ গ্রুপ ও নাঈম গ্রুপের অনুসারীরা।

এ সময় দু পক্ষই অপর পক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের সাত-আটজন আহত হন।

খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

কিন্তু এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে উভয়পক্ষ ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ আবদুস সালাম হলের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। 

সেখানেও উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ভাষা শহীদ সালাম হলের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। 

তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গিয়ে ছাত্রদের নিবৃত করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতেই ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, সালাম হলের সামনের ঘটনায় ইটের আঘাতে শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। 

আহত ছাত্রদের মধ্যে কাজী ফয়সাল, তুষার, পিয়াল, তারেক ও আকন্দ রনির পরিচয় জানা গেছে। তাদের ক্যাম্পাসে মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো কমিটি না থাকলেও কয়েকজনের অনুসারী হিসেবে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। 

প্রক্টর ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ইটের আঘাতে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন আহত হয়েছেন। ” 

তিনি জানান, পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর রাতে তারা হল পরিদর্শন করে দেখেন ৩০২ ও ৩০৩ নং কক্ষের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতবোমা বা অন্য কোনো বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। 

এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টর শাহানা রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী প্রক্টর আল মামুন এবং সহকারী প্রভোস্ট নাজমুস সাকিব। 

ইকবাল হোসেন সুমন বলেন, কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 

“তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রক্টরিয়াল সভায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” 

এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগ পর্যন্ত বিবাদমান সব পক্ষ ক্যাম্পাসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান প্রক্টর। 

সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিক্ষিপ্তভাবে ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। 

ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।