“পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রদূতরা অ্যাকটিভিস্টদের মত দল বেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায় না,” বলেন মোমেন।
Published : 21 Jul 2023, 07:22 PM
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করায় কারও নাম উল্লেখ না করে বিদেশি কূটনীতিকদের এক হাত নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, “বিদেশিরা নিজেদের এ দেশের সম্রাট মনে করে।”
গণমাধ্যমে অতি প্রচারের কারণে কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে ‘মজা পায়’ বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
শুক্রবার সিলেট জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন মোমেন।
তার ভাষায়, “পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রদূতরা অ্যাকটিভিস্টদের মতো দল বেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায় না।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্যকারীদের বয়কট করতে গণমাধ্যমকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করায় বিদেশি কূটনীতিকদের সমালোচনা করে আসছে সরকার। একাধিকবার তলবও করা হয়েছে।
এর মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের পর আসা কয়েকটি মন্তব্য সরকারকে আরও ক্ষুব্ধ করেছে।
ইউরোপে ১১টি দেশের মিশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসার পর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এই বিবৃতি সেই চুক্তিবিরোধী মন্তব্য করে কনভেনশন মেনে চলতে অনুরোধও করেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করলে বৃহস্পতিবার তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানতে চান, তার দেশে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন কি না, হাউজ অব কমন্স ভেঙে দেওয়া হয় কি না, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক নামে কোনো সরকার দায়িত্ব নেয় কি না, কাউকে নির্বাচনে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয় কি না।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ জন মারা গেল। একটা দেশও কথা বলেনি। আমাদের দেশে কে কী করল, সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার।
“এটি অভন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ, যা ভিয়েনা কনভেশনশনের ধারেকাছেও নেই। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ বলে তারা এটা করে।”
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৫ জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সিলেট অঞ্চলের অনেক মনীষী আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশিষ্টতা দিয়েছেন।
“বিশেষ করে হাসন রাজার গান, শাহ আব্দুল করিমের গান… উনাদের সৃষ্টিশীল কর্ম মানুষের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। এর কারণ সম্ভবত এসব গুণীজন একাধারে গান রচনা, সুরারোপ, সংগীত চর্চায় আত্মনিবেদিত ছিলেন। সে কারণে তাদের সৃষ্টি অনন্য এবং অমর হয়ে আছে।”
যারা সম্মাননা পেলেন এবং আগামীতে যারা পাবেন, তারা এসব সৃষ্টিশীল কাজে আরও বেশি মনোনিবেশ করবেন বলে আশার কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনার সরকার সংস্কৃতি চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “জেলা, উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলার কর্মকাণ্ড আয়োজনে সরকারি ব্যবস্থাপনা পূর্বের চেয়ে এখন অনেক বাড়ানো হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাশ গুপ্ত।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০২২ পদক প্রাপ্ত গুণীশিল্পীরা হলেন মিহিরকান্তি চৌধুরী (লোকসংস্কৃতি), পূর্ণিমা দত্ত রায় (কণ্ঠসংগীত), চম্পক সরকার (নাট্যকলা), জ্যোতি ভট্টাচার্য্য (আবৃত্তি) ও মোঃ মিনু মিয়া (যন্ত্রসংগীত)। সম্মাননা প্রদান আয়োজনের শুরুতেই পপি দাসের সহপরিচালনায় ‘আলো আমার আলো, ওগো আলোয় ভুবন ভরা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। অনুষ্ঠানে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৫জন গুণীশিল্পীর হাতে সম্মাননা পদক, সম্মাননা চেক, সনদপত্র ও উত্তরীয় তুলে দেন মন্ত্রী।
আবৃত্তিশিল্পী রোহেনা সুলতানার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত শিল্পীদের পক্ষে অনুভূতি প্রকাশ করেন মিহির কান্তি চৌধুরী।