খেয়াং হল পৃথিবীর ২৯৪তম লিখিত ভাষা, যার বর্ণমালা কী-বোর্ডে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল রূপ পেল।
Published : 24 Feb 2024, 08:27 AM
বান্দরবানের খেয়াং জনগোষ্ঠীর বিপন্নপ্রায় ভাষার বর্ণমালা তৈরি হয়েছিল বছর ছয়েক আগেই, এবার সেই বর্ণমালা যুক্ত হল কম্পিউটার কি বোর্ডে।
এর ফলে ডিজিটাল মাধ্যমে খেয়াং ভাষা চর্চা ও ভাব প্রকাশের পাশাপাশি সাহিত্য রচনার সুযোগ তৈরি হল। খেয়াং হল পৃথিবীর ২৯৪তম লিখিত ভাষা, যার বর্ণমালা কী-বোর্ডে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল রূপ পেল।
ফ্রেন্ডস অব এনডেঞ্জারড এথনিক ল্যাংগুয়েজস (ফিল) নামে ভাষা গবেষকদের একটি দল খেয়াং বর্ণমালাটি কম্পিউটার কি-বোর্ডে যুক্ত করার কাজটি করেন। শনিবার দুপুরে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরুমুখ খেয়াং কমিউনিটি সেন্টারে এই কী-বোর্ড উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফিল-এর তত্ত্বাবধানে প্রায় দুই মাসের চেষ্টায় কাজটি শেষ করতে পেরেছেন গবেষকরা। ভবিষ্যতে তারা মোবাইল কি-বোর্ডে ব্যবহারের উপযোগী অ্যাপ তৈরি করবেন। তখন খেয়াং ভাষার বর্ণমালা ব্যবহার করে মোবাইলেও তথ্য আদান প্রদান করা যাবে।
স্থানীয় শিক্ষক ও সমাজকর্মী অংসাউ খেয়াং-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ম্রাসা খেয়াং। উপস্থিত ছিলেন, ভাষা গবেষক মৃদুল সাংমা, ভাষা প্রযুক্তিবিদ সমর মাইকেল সরেন, ভাষা গবেষক রিবেং দেওয়ান, শিক্ষিকা হ্লা ক্রই প্রু খেয়াং ও শিক্ষক চিংহ্লা উ খেয়াং।
ফিলের ভাষা গবেষক রিবেং দেওয়ান বলেন, দেশে বিপন্নপ্রায় যেসব ভাষা রয়েছে, সেগুলোর ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্য নিয়ে আড়াই বছর আগে কাজ শুরু করেন তারা। সেই যাত্রায় এ পর্যন্ত ১৬টি বিপন্ন ভাষার কম্পিউটার কি-বোর্ড তৈরিতে তারা সক্ষম হয়েছেন।
ভাষা প্রযুক্তিবিদ সমর মাইকেল সরেন বলেন, খেয়াং ভাষার প্রচলন ও চর্চা বাড়াতে এই ভাষায় কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও রুপকথার গল্প খেয়াং বর্ণমালায় লেখা দরকার।
পাহাড়িয়া, চাকমা, ম্রো, গারো, কোল, মুন্ডা, সান্তাল, খুমী, ও খাড়িয়া, ওরাও সম্প্রদায়ের ভাষা নিয়েও ঠিল কাজ করছে বলে জানান তিনি।
খেয়াং ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবনের অন্যতম সদস্য ঞো জাই উ খেয়াং বলেন, নিজেদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সহায়ক বর্ণমালা উদ্ভাবন করার পর ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর খেয়াং ভাষা ও বর্ণমালা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়। এই ভাষার বর্ণমালার মধ্যে স্বরবর্ণ ১১টি আর ব্যঞ্জনবর্ণ ২১টি। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেয়াং ভাষা শেখানো শুরু হয়েছিল। তবে আর্থিক সংকটে তা বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, রোমান হরফে খেয়াং ভাষার উচ্চারণ ও ধ্বনির কিছুই মিল নেই। রোমান বর্ণমালা দিয়ে লেখা ও ভাষা চর্চা করা হলে খেয়াং জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি মূল্যবোধ সব হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশের নৃভাষা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশে ১৫টি ভাষা বিপন্ন ভাষার তালিকায় রয়েছে। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঁচটি বিপন্ন ভাষার মধ্যে খেয়াং ভাষা একটি।
খেয়াং সামাজিক নেতারা জানান, তাদের মধ্যে লাইতু ও কুনতু নামে দুই সম্প্রদায়ের খেয়াং রয়েছেন। লাইতু খেয়াংদের বসবাস সমতলের অংশে। পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের কুনতু খেয়াং বলা হয়। লাইতু খেয়াংরা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী, অপর দিকে কুনতু খেয়াংরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ।
বিভিন্ন সময় নিজেদের করা জরিপে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি দুই জেলা মিলে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজারের মত খেয়াং রয়েছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]