কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা: খাগড়াছড়ি থেকে ২ আসামি আটক

জুমার নামাজ পড়ে বের হবার পর মসজিদের সামনেই হত্যার শিকার হন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2023, 05:15 AM
Updated : 21 May 2023, 05:15 AM

কুমিল্লা সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকে মসজিদের সামনে প্রকাশ্যে গলা কেটে হত্যা মামলার দুই আসামিকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। 

ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় পানছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে শনিবার সকালে দুই জনকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা আটক করেছেন বলে জানিয়েছেন পানছড়ি থানার ওসি হারুনুর রশীদ।  

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে বের হতেই হত্যার শিকার হন কুমিল্লার সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক (৪০)। 

এ ঘটনায় শনিবার সকালে এনামুলের বাবা সদর উপজেলার আলেখাচর গ্রামের আবদুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন। 

মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার আসামিরা হলেন- মৃত আবদুল খালেকের ছেলে কাজী জহিরুল ইসলাম জহির, কাজী আমিনুল ইসলামের ছেলে কাজী আমান উল্লাহ, জাকির হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ, মৃত আবদুল খালেকের ছেলে কাজী এনামুল হক ও কাজী নাজমুল হক, আবদুল মালেক সর্দারের ছেলে আতিকুর রহমান পাভেল, মৃত আবদুল মোতালেবের ছেলে কাজী নিজাম উদ্দিন, জয়নাল আবেদীনের ছেলে বিল্লাল হোসেন, মৃত কেরামত আলীর ছেলে এয়ার আহমেদ এবং মৃত তোয়াছিলের ছেলে জাকির হোসেন। তারা সবাই আলেখারচর এলাকার বাসিন্দা। 

মামলার ৬ নম্বর আসামি আতিকুর রহমান পাভেল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আর ৯ নম্বর আসামি এয়ার আহমেদ আদর্শ সদর উপজেলার বিএনপি যুগ্ম আহ্বায়কের পদে রয়েছেন। 

এদিকে, ঘটনার পর শুক্রবার রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি কাজী নিজাম উদ্দিন ও জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, দুই আসামিকে শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এদিকে, শনিবার সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং আমতলী এলাকা থেকে পানছড়ি থানা পুলিশের সহযোগিতায় মামলার দুই নম্বর আসামি আমান উল্লাহ ও তিন নম্বর আসামি আবু সাঈদকে আটক করে কুমিল্লার ডিবি পুলিশের একটি দল। পরে দুই আসামিকে নিয়ে বেলা ১১টায় কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ডিবি পুলিশের দলটি। 

আটক দুইজন কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়েছিলো, হত্যার পর তারা গা-ঢাকা দিতে ভারত সীমান্তবর্তী পানছড়ি উপজেলার লোগাং এলাকায় পালিয়ে আসেন বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা। 

তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি কুমিল্লার ডিবি পুলিশের এসআই আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না।” 

তবে পানছড়ি থানার ডিউটি অফিসার এসআই কামরুল ইসলাম বলেন, “কুমিল্লার আলোচিত ওই খুনের মামলার দুই আসামিকে আমাদের থানা পুলিশের সহায়তায় আটক করে নিয়ে গেছে কুমিল্লা ডিবি পুলিশের সদস্যরা। এ বিষয়ের বিস্তারিত পরবর্তীতে তারাই জানাবেন।” 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা ডিবির ওসি রাজেস বড়ুয়া বলেন, “আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযান শেষ হলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে।” 

এদিকে আওয়ামী নেতা এনামুল হক হত্যা মামলার আসামিরা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী বলে দাবি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। 

নিহতের বাবা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, “জামায়াত-শিবির আর বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে খুন করেছে। খুন করার ঘটনা ঘটেছে দিনে-দুপুরে সবার সামনে। 

“মামলার প্রধান আসামির সঙ্গে রাজনৈতিক, গত ইউপি নির্বাচনে তার প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করা এবং একটি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। আমি খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসি চাই।” 

তিনি আরও বলেন, “সম্প্রতি জামায়াত নেতা কাজী জহিরুল ইসলাম জহিরের জুয়া খেলা ও মাদক সেবনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কাজী জহির ঘটনার পর থেকে বলছে আমার ছেলে এই ভিডিও ভাইরাল করেছে। এসব কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে খুন করেছে।” 

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নিয়াজ পাবেল বলেন, “এনামুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার জুমার পড়ে বের হলে জামায়াত নেতা কাজী জহিরের উপস্থিতিতে তার অনুসারী আমানসহ জামায়াত-শিবির কর্মীরা এনামুলকে গলা কেটে হত্যা করে। 

“এনামুলের সঙ্গে জামায়াত নেতা কাজী জহিরের রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি এনামুলের প্রতিষ্ঠিত আলেখাচর দক্ষিণ পাড়া জমিরিয়া তালিমুল হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা সম্পত্তির দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। 

“এ মাদ্রাসার সেক্রেটারি ছিলেন এনামুল। কাজী জহির দীর্ঘদিন ধরে এ মাদ্রাসা দখলের চেষ্টা করছিলেন।” 

তবে এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মো. কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, “কাজী জহির কখনো জামায়াত বা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সে আওয়ামী লীগেরই সক্রিয় কর্মী। দলীয় বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ের তার যাওয়ার ছবি ফেসবুকে আছে। 

“জহির স্থানীয় নেতা আবুল হোসেন গ্রুপের অনুসারী। মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বেই খুন হয়েছে এনামুল। জামায়াতের সঙ্গে এ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।” 

ব্যক্তিগত ও নিজেদের দ্বন্দ্বে খুনের ঘটনাকে এখন রাজনৈতিক বিরোধের রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের এই নেতা। 

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ পড়ে মসজিদ বের হতেই প্রকাশ্যে গলাকেটে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হককে হত্যা করা হয়। 

স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা মনির হোসাইন বলেন, “দুর্বৃত্তরা  নামাজ শেষে বের হতেই এনামুলকে ঝাপটে ধরে। এরপর টেনেহিঁচড়ে মসজিদের সামনের এলাকায় তার  গলায় ও ঘাড়ে ধারালো ছুরি চালিয়ে গলা কেটে দেয়। মুহূর্তের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটিয়ে তারা পালিয়ে যায়। 

“পরে স্থানীয়রা এনামুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার সময় এনামুল খুনিদের সঙ্গে বারবার ধস্তাধস্তি করে চিৎকার করেছেন। আমরাও খুনিদের বিচার চাই।”

 আরও পড়ুন

Also Read: কুমিল্লায় মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকে গলা কেটে হত্যা