‘ঘুষ খেলেন’ আওয়ামী লীগ নেতা, মীমাংসা করলেন ইউএনও

চারজনকে ৫০ এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে নারীরা জানিয়েছেন।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2023, 12:57 PM
Updated : 6 May 2023, 12:57 PM

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার নামে সাত দরিদ্র নারীর কাছ থেকে এক আওয়ামী লীগ নেতা ‘ঘুষ’ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মামলার পর ইউএনও মধ্যস্ততায় সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে নারীরা জানিয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নারীদের নিজ বাসভবনে ডেকে দীর্ঘ সময় বৈঠক করে পাঁচজনকে টাকা ফেরত দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়।

এরপর দুপুর ২টার দিকে ঘুষের টাকাসহ ইউএনওর বাসভবনের পেছনের প্রাচীরে মই লাগিয়ে এক নারীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। বাকিরা বের হন ফটক দিয়ে।

ওই নারীরা হলেন- উপজেলার আসমা বেগম, ইঞ্জিরা বেগম, রাবিয়া বেগম, রিজিয়া বেগম, হাবিয়া বেগম, সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগম। এদের মধ্যে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগম এ ব্যাপারে নাটোর আদালতে মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে ইউএনও শ্রাবণী রায় বলেন, “ভুক্তভোগীরা আমার কাছে অভিযোগ করেন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য আমি বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি মাত্র।“

তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

নারীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল নাজিরপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাতজনের কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। তাদের মধ্যে ছয়জন ঘর পেয়েছেন। এরপর ঘুষের টাকা ফেরত পেতে বুধবার সাহারা খাতুন ও মমতাজ বেগম নাটোর আদালতে মামলা করেন।

এ ছাড়া তারা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতার নামে একটি অভিযোগও দেন। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগের শুনানি করেন নাটোরের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহম্মদ মাসুম। 

শুনানি গ্রহণের পর রাতে আওয়ামী লীগ নেতা নারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের ভূল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং ইউএনওর মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন।

এরপরই শুক্রবার ইউএনওর বাসায় বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা বসে। সেখান থেকে টাকা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গুরুদাসপুর থানা মোড়ে নারীরা সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ইউএনও শ্রাবণী রায় টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মোবাইলে ফোন করেন এবং শুক্রবার তার সরকারি বাসভবনে আসতে বলেছিলেন।

অভিযোগকারী সাত জনের মধ্যে চারজনকে ৫০ হাজার এবং একজনকে ৪০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে সাহারা বেগম ও মমতাজ বেগমের মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে না বলে জানান নারীরা।

এ সময় ফেরত পাওয়া টাকার বান্ডিল সংবাদকর্মীদের দেখান অভিযোগকারী নারীরা।

ইউএনও বাসা থেকে কেন প্রাচীর টপকিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে আসমা বেগম বলেন, “সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে ইউএনওর পরামর্শে তার গাড়ি চালক জয়নাল হোসেনের সহায়তায় টাকাসহ মই বেয়ে প্রাচীর পার হয়েছি।”

নাটোরের অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূর মোহম্মদ মাসুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগকারীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেব।“

শুনানির সময় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

শুনানি গ্রহণের একদিন পরেই ইউএনও ওই ঘুষের টাকা ফেরত দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, “আপস-মীমাংসা ইউএনও করতে পারেন। শুনেছি, ভুক্তভোগীরা নাকি মীমাংসার জন্যও আবেদন করেছিলেন।“

অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসব অভিযোগ মিথ্যা, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে আমি সংবাদ সম্মেলন করব।“

এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা বলেন, “ছুটির দিনে নিজের বাসভবনের অফিসে বসে ইউএনও আপস-মীমাংসার কাজ করতে পারেন। টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টা আমি জেনেছি।

“বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা। ইউএনও নতুন এসেছেন, তিনি ছুটির দিনে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছেন।”