গোপালগঞ্জে হিন্দুর জমি দখলের চেষ্টা ‘রাজাকারপুত্রের’

হারুন মোল্যা রোববার রাতে ট্রাকভরতি বালু নিয়ে নিরোদ রায়ের জমি ভরাটের চেষ্টা করেন; পরে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 11:25 AM
Updated : 7 Dec 2022, 11:25 AM

গোপালগঞ্জে একটি হিন্দু পরিবারের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করেছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি, যার বাবা ‘রাজাকার’ ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

রোববার গভীর রাতে কাশিয়ানী উপজেলার বেথুড়ী ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে ওই পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে।   

অভিযোগকারী ও পুলিশ জানিয়েছে, হারুন মোল্যা নামের ওই ব্যক্তি রাতে ট্রাক ভরতি বালু নিয়ে জমি ভরাটের চেষ্টা করেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়। 

কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার এনায়েত হোসেন জানান, হারুন মোল্যা একাত্তরের ‘সাজাপ্রাপ্ত রাজাকার’ মৃত খিয়াল উদ্দিন মোল্যার ছেলে। 

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নিরোদ রায় কাশিয়ানী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

অভিযোগে বলা হয়, ২৫ বছর আগে নিরোদ রায়ের কাছ থেকে হারুন মোল্যা ১৩ শতক জমি কিনে সেখানে বসবাস করছেন। কিছুদিন আগে হারুন মোল্যা প্রতিবেশী নিরোদ রায়ের বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় খুঁটি পুঁতে দখলের পাঁয়তারা করেন। 

বিষয়টি নিয়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে হারুন মোল্যা ও তার পরিবারের লোকজন নিরোদ রায়ের পরিবারের কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। 

কিন্তু রোববার রাত ১২টায় নিরোদ রায়ের জমিতে ট্রাকভরতি বালু এনে ফেলেন হারুন। নিরোদ রায়ের পরিবার বাধা দিতে গেলে হারুন মোল্যার লোকজন তাদের হত্যার হুমকি দেয়। 

পরে কাশিয়ানী থানার রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে বালু ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়। 

নিরোদ রায়ের পরিবারের অভিযোগ, সকালে পুনরায় সেই জমিতে বালু ফেলা শুরু করেন হারুন মোল্যা ও তার লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। 

নিরোদ রায়ের স্ত্রী শিক্ষক ইতি রানী রায় বলেন, “প্রভাবশালী ওই রাজাকারপুত্র হারুন মোল্যার পরিবারের কাছে আমরা দীর্ঘদিন যাবত জিম্মি। তারা যখন যা বলে আমাদের তাই মেনে নিতে হয়। আমাদের জমি দখল করে কাজ করছে; আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের হত্যা ও গুমের হুমকি দেয়। আমরা হারুন মোল্যার হাত থেকে বাঁচতে চাই।” 

এ বিষয় হারুন মোল্যা বলেন, “আমি নিরোদ রায়ের কাছ থেকে ১৩ শতক জমি কিনেছিলাম। জমি পরিমাপ করে দেখি সেখানে ১৩ শতক জমি নেই; দুই শতক কম আছে। তাই আমি এখান থেকে দুই শতক জমি দখল করছি। রাতে বালু ফেলা শুরু করেছি। এর আগে সার্ভেয়ার এসে জমি পরিমাপ করেছেন। সেখানে আমাদের সার্ভেয়ার পরিমাপে ভুল করেছে।”  

বেথুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান মিয়া বলেন, বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগে চারজন সার্ভেয়ারসহ এলাকার প্রায় দেড়শ লোক বসে জমি পরিমাপ করা হয়। 

“তখন জানতে পারলাম ওই জায়গা নিরোদ রায়ের। হারুন মোল্যা সালিশ না মেনে ওই জায়গায় বালু ফেলছেন। আমরা এলাকার লোকজন ও পুলিশ প্রশাসন নিয়ে পুনরায় আগামী শনিবার বসে সমাধান করব। এই মুহূর্তে হারুন মোল্যাকে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে।” 

কাশিয়ানী থানার রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। দুপক্ষকে বসে সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। হারুন মোল্যা কোন যুক্তিতে কাজ করছেন জমির দলিল দেখে তার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন না।”