এবারের শোভাযাত্রায় ‘আঁধার কাটিয়ে আলোর পথে’ থিম ধরে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
Published : 13 Apr 2024, 12:52 PM
নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতিতে বৈশাখের রঙে সেজে উঠছে নেত্রকোণা। বাঙালি সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ‘আঁধার কাটিয়ে আলোর পথে’ এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বর্ষবরণে নানা কর্মসূচি নিয়েছে প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে নেত্রকোণা শহরসহ ১০ উপজেলাজুড়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ব্যাপক আয়োজন চলছে।
নববর্ষ ঘিরে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে জেলা, জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, উদীচী, মিতালী সংঘ, মধুমাছি ও কচিকাঁচার মেলা, পূর্বাঞ্চলীয় বৈশাখী মেলা কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী গ্রামীণ মেলা, কৃষক মেলা, লোকজ গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ খেলাধূলা, ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভাসহ নানা আয়োজন।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্যে হাতি, ঘোড়া, ময়ুর, মুখোশ বানানো, প্যান্ডেল, মঞ্চ তৈরীর কাজ, সংগীত, নাচ পরিবেশনার অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শিল্পী, সংস্কৃতি কর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, পহেলা বৈশাখের দিন রোববার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে কালেক্টরেট মাঠে বর্ষবরণের আয়োজন হবে। পরে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মাঠে হবে নববর্ষের মেলা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
এর আগে নববর্ষ ঘিরে শুক্রবার থেকে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেদিন শিক্ষার্থীদের মাঝে ‘বাংলা নববর্ষ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার চিত্রাঙ্কন, সঙ্গীত প্রতিযোগীতা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়াও কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে দুই উপজেলা সদরে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহীর আয়োজনে থাকছে দিনভর বৈশাখের কৃষি মেলা। এই দুই মেলার মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন কুদ্দুছ বয়াতীসহ বাউল শিল্পীরা।
পূর্বধলায় পহেলা বৈশাখের বিকালে রাজধলা বিলে ঘুড়ি তৈরি ও উড়ানোর প্রতিযোগীতার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অসিত ঘোষ জানান, জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে তাদের আয়োজনে থাকছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, রাখি বন্ধন, নানান মিষ্টান্নসহকারে খাবারের আয়োজন।
মিতালী সংঘের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বরাবরের মতোই নেত্রকোণার মূল মঙ্গল শোভাযাত্রা এবারও বর্ণাঢ্য আকারে বের হবে। শোভাযাত্রায় ‘আঁধার কাটিয়ে আলোর পথে’ থিম ধরে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে ।”
“এজন্য ক্লাবের শিল্পীরা হাতি, ঘোড়া, নানান মুখোশসহ ফেস্টুন তৈরি করছেন। তাতে রঙ করা হচ্ছে এখন। প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছি।”
মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্যে রঙ তুলিতে শেষ আঁচড়ে ব্যস্ত ছিলেন মিতালী ক্লাবের ঐতিহ্য তূর্য। তিনি বলেন, “সকল অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে নতুন শুরুর লক্ষে আমরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবো। আমাদের লক্ষ্য একটাই, সকল অন্ধকার, মৌলবাদ, সকল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমরা এক হই। আমাদের ধর্ম, বর্ণ, যাই হোক আমরা সবাই এক।”
তিনি আরও বলেন, “পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্যে থিম ভিত্তিক বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে কাজ করছি। শোভাযাত্রার জন্যে বিভিন্ন মুখোশ, ময়ূর, হাতি, ঘোড়াসহ পশুপাখির অবয়ব, পোস্টার করছি “
জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নৃত্য শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী তমা রায় বলেন, “এ দিনটির জন্যে আমরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। লোকগানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা থাকবে। সারাদিন কবিতা, গান থাকবে। এ জন্যে প্রায় এক মাস ধরে অনুশীলন করা হচ্ছে।
“বর্ষবরণে আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীরা পুরোদমে ব্যস্ত। নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, চিত্রাংকন থাকছে। আশা করছি ভাল পরিবেশনা হবে। নতুন বছর সবার জন্যে মঙ্গলময় হোক এটাই আমাদের চাওয়া।”
নেত্রকোণা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান বলেন, “এবার বর্ষবরণে মুক্তিযুদ্ধ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বিষয় নানাভাবে কমসূচির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।”