আলফাডাঙ্গায় ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের সুপারিশ নিয়ে বিক্ষোভ

মনোনয়নের সুপারিশ পাওয়া হারিচুর রহমান সোহানের বাবা ‘রাজাকার’ ছিলেন বলে প্রতিবাদকারীদের ভাষ্য।

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 04:32 PM
Updated : 20 Nov 2022, 04:32 PM

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার সুপারিশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।  

রোববার বিকালে আলফাডাঙ্গা বাজারের চৌরাস্তা মোড়ে তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভের আয়োজন করেন।  

বিক্ষোভকারীদের দাবি, মনোনয়নের সুপারিশ পাওয়া হারিচুর রহমান সোহানের বাবা ‘রাজাকার’ ছিলেন। 

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, ওই প্রার্থীর বাবার নাম পিচ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে থাকলেও তিনি ‘রাজাকার ছিলেন না’। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। 

সমাবেশে গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোনায়েম হোসেন খান, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনামুল হাসান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম বক্তব্য দেন। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২৯ ডিসেম্বর গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।   

ওই সভায় গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম হোসেন খানের পক্ষে ১১ জন ভোট দেন। কিন্তু পরে অনিয়ম করে তার পক্ষে ৮ ভোট দেখিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান রাজাকারপুত্র হারিচুর রহমান সোহানকে এক নম্বর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হয় সভায়।   

তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা এবং মনোনয়ন বোর্ডে সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যদের মনোনীত প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানান। 

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোনায়েম হোসেন খান বলেন, “মোট ১৯ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে আমি ১১ ভোট পেয়েছি, কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে আমি ৮ ভোট পেয়েছি। ভোট প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি।” 

‘উৎকোচ নিয়ে’ হারিচুর রহমান সোহানকে প্রার্থী করার সুপারিশ করা হয় বলে মোনায়েম হোসেন খানের অভিযোগ। 

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হাসান বলেন, “আলফাডাঙ্গা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এখানকার ভোটে। এখানে একজন রাজাকারের ছেলেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করবেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ – এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আমরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিবো না।” 

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সুজা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। তখন আব্দুর রহমান সাহেব আলফাডাঙ্গায় ছিলেন না। তিনি তখন ঢাকায় তার ভগ্নিপতির বাসায় থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি এলাকায় স্বাধীনতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না, তবে তার নাম পিস কমিটিতে ছিল।”  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, হারিচুর রহমানের বাবা রাজাকার ছিলেন না। তবে তিনি ওই সময় ইউনিয়ন বোর্ডে ছিলেন। সেই হিসেবে তার নাম হয়তো পিচ কমিটিতে থাকতে পারে। 

“আর মনোনয়ন সভায় উপস্থিত ভোটারেরা যেভাবে ভোট দিয়েছেন আমরা সেভাবেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছি। এখানে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”  

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ বলেন, “বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে জানিয়েছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। আমরা গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” 

এ ব্যাপারে হারিচুর রহমান সোহান বলেন, “আমার বাবার নামে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি বর্তমানে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।” 

তিনি বলেন, “মোট ভোটার ছিল ২০ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছে ১৯ জন। মোট প্রার্থী ছিল ৫ জন। আমি পেয়েছি ১১ ভোট আর মোনায়েম ভাই পেয়েছেন ৮ ভোট। অন্যরা কোনো ভোট পায়নি।”  

তার বড় ভাই যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বড় ভাই আগে যুবদল করতেন, এখন তিনি রাজনীতি করেন না।”