গাজীপুরে ‘শিশুকে জোর করে বিয়ে দিলেন’ ইউপি সদস্য, বিপাকে হিন্দু পরিবার

‘দুই দিন আমার মেয়ের সঙ্গে থাকার পর ছেলের খোঁজ পাই না।’

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2022, 05:35 PM
Updated : 13 August 2022, 05:35 PM

গাজীপুরে ‘খারাপ কাজের অপবাদ দিয়ে মারধরের পর এক শিশু ও তরুণকে বিয়ে দিয়েছেন’ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। হিন্দু রীতিনীতি না মানায় পরিবারটি বিপাকে পড়েছে।

জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ‘ঘটনা নিষ্পত্তি’ করেছেন বলে দায় স্বীকার করেছেন।

মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইউপি সদস্য বলছেন, ‘এসব কাজ কবে থেকে শুরু করেছিস? আরও করবি?’ এ কথা বলে মেয়েশিশুটির চুল ধরে লাঠি দিয়ে একের পর আঘাত করছেন ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম। শিশুটি খাট থেকে পড়ে গেলে চুল ধরে টেনে তুলে আবার পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য।

মেয়েটি স্থানীয় এক স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

এলাকাবাসী সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৬ মে বিকেলে ইউপি সদস্যসহ এলাকার কয়েকজন মেয়েটির বাড়ি যায়। ওই তরুণ সে সময় শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলেন। ইউপি সদস্য ওই তরুণ ও মেয়েটিকে ‘খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার’ অভিযোগ তুলে মারধর করে বিয়ে দিতে চান। ছেলে-মেয়ে বিয়েতে রাজি ছিল না। তাদের জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। আদালতে বিয়ে নিবন্ধন করা হবে বলে ইউপি সদস্য ঘোষণা দেন।

পরিবার দুটি এ ঘটনায় বিপদে পড়েছে। সামাজিকভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে গভীর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছে।

শিশুটির বাবা সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ওই দিন বাড়ি ছিলাম না। পরে শুনেছি মেম্বার সাহেব ডকুমেন্ট করে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের হিন্দুদের মধ্যে বিয়ের রীতিনীতি রয়েছে। সেসব কিছু মানা হয়নি। দুই দিন আমার মেয়ের সঙ্গে থাকার পর ছেলের খোঁজ পাই না। আমার মেয়ে নাবালিকা। আমার স্ত্রী থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছে। মেম্বারের কাছে বিয়ের ডকুমেন্টের জন্য কয়েকবার স্ত্রীকে পাঠিয়েছি। এখনও পাইনি।

“এ রকম অবস্থায় আমাদের খোঁজও কেউ নিচ্ছেন না। আমরা গরিব। কারও বিরুদ্ধে কথা বলব বা বিচার চাইব, সেই সাহসও পাই না। একদিন মজুরের কাজ না করলে পেতে ভাত জোটে না।”

বিষয়টি ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম স্বীকার করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনা নিষ্পত্তির ডকুমেন্ট রয়েছে।”

ভিডিওটি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন বলে স্বীকার করেন।

ইউপি সদস্য বলেন, “ভিডিও কে করেছে তা জানি না। কে কখন ভিডিও করল বুঝতে পারিনি। আমি একটি আইডিতে ফুটেজটি দেখেছি।”

কিশোরীর মা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানালেও কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

ওসি বলেন, “অভিযোগ প্রদানের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানব। ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শককে বিষয়টি দেখার জন্য এখনই বলছি।”