ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে সমাবেশে আগতদের মধ্যে টাকা বিতরণের একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
Published : 23 May 2024, 01:30 AM
ফেনীতে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ, সরকারি সহায়তার কার্ড বন্ধসহ নানা হুঁশিয়ারির মাধ্যমে ভোটের প্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ২৯ মে ভোট হবে ফেনী সদরে। এতে দোয়াত-কলম প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল।
তার পক্ষে মঙ্গলবার বিকালে ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নে নারী সমাবেশ হয়। ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে সেই সমাবেশে আগতদের মধ্যে টাকা বিতরণের একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান করিম উল্যাহের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহান আরা বেগম সুরমা।
জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিলা আক্তার মিমির সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শুসেন চন্দ্র শীল, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এ কে শহীদ উল্যাহ খোন্দকার ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মুর্শিদা আক্তার।
সমাবেশ শেষে প্রার্থী ও অতিথিরা মঞ্চ ছাড়ার পর আগত তিন হাজারেরও বেশি নারীর মধ্যে টাকা বিতরণ করেন করিম উল্যাহর লোকজন।
আগের দিন সোমবার ভোট দিতে না গেলে ‘বয়স্ক ও মাতৃত্বকালীন ভাতা’ কার্ড না দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন এই জনপ্রতিনিধি। সেই ভিডিওটিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সোমবার বিকালে কাজিরবাগ ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত নারী সমাবেশে করিম উল্যাহ বলেন, “যারা ভোট দেবেন, কেন্দ্রে ভোটার লিস্টে টিক চিহ্ন দেওয়া তাদের তালিকা থাকবে। মাতৃত্বকালীন ভাতা যাদের আছে সব ভাতা ভোটার লিস্ট তালিকা দেখে যারা ভোট দিয়েছে তাদের দেওয়ার অনুরোধ করছি। যারা কেন্দ্রে যাবেন না তাদের দেওয়া দরকারও মনে করি না, তারা সচেতন না।”
এ বিষয়ে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্যাহকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি টাকা বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, “জনপ্রতি একশত টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটি ভোটের টাকা না। সমাবেশে আগতদের গাড়ি ভাড়া।”
উপজেলা চেয়ারম্যান এ টাকার জোগান দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের নয়, টাকাগুলো তার নিজের।
তবে ভোটারদের হুঁশিয়ারি ও টাকা বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, "এরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। আমি থাকা অবস্থায় এ রকম কোনো ঘটনা কি ঘটেছে বা আমি কি ছিলাম?"
তাকে ফের প্রশ্ন করা হয়- ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করছে। সেক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?
তখন শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, "আমি বিষয়টি জানি না। ইউপি চেয়ারম্যান ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি তিনি কী করেছেন তা উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এর সাথে আমার বা নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।"
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তা, কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচনি কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, “ফেনী সদর উপজেলায় ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।”
একই কথা বলেন ফেনী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে তিনি রির্টানিং কর্মকর্তার দায়িত্বে নেই এবং ভোটারদের টাকা বিতরণ করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগও তিনি পাননি।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইজন করে মোট ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৭ মে প্রার্থীদের প্রচার শেষ হবে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপে ২৯ মে ফেনী সদর ছাড়াও সোনাগাজী ও দাগনভূঞায় উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে।