হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, অধিক ফলন ও একইসঙ্গে সবাই আলু নিয়ে আসার কারণে এ বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে।
Published : 10 Mar 2025, 07:09 PM
জয়পুরহাটে হিমাগারগুলোতে আলু রাখা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। দীর্ঘ লাইন ধরে অপেক্ষা করেও আলু রাখতে না পারায়
ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
হিমাগারগুলোর ফটকে দুই-তিন ধরে দিন অপেক্ষা করেও আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে ক্লান্তি ও হতাশা ফুটে উঠেছে তাদের চোখে-মুখে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১০ লাখ টন। এবার জেলায় আলুর উৎপাদন বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জয়পুরহাট জেলায় মোট ২০টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা আছে দুই লাখ টন।
ভরা মৌসুমে দাম কম থাকায় কৃষক তাদের সাধ্যমত উৎপাদিত আলু জেলার হিমাগারগুলোতে সংরক্ষণ করতে থাকেন।
নিয়ম অনুযায়ী হিমাগারে আলু রাখার জন্য প্রতিবছর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বুকিং দিতে হয়।
তবে এবার বুকিং দিয়েও আলু রাখতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন চাষি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা হিচমী বাজারের ছানোয়ার হোসেন বলেন, “আমি দেড় বিঘা জমি আলু চাষ করেছি। ২০ বস্তা আলুর জন্য বুকিং রিসিটও কেটেছি। এখন স্টোর আমার আলু নিবে না। তারা বড় ব্যবসায়ী আর বড় কৃষকের বেশি আলু স্টোরে ভরাবে। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বাজারে বেচলাম।”
বেশিকিছু হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, যানবাহন ভরে আলু নিয়ে এসে দীর্ঘ লাইন ধরে কেউ কেউ ১০-১২ ঘণ্টা, আবার অনেকে দুদিন ধরে হিমাগারের ফটক থেকে বাইরের রাস্তায় অপেক্ষা করছেন তাদের উৎপাদিত আলু নিয়ে।
তাদের মধ্যে মূল ফটকের বাইরে রাস্তায় অপেক্ষমান দিনাজপুরের হিলি থেকে ওয়াজেদ, জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছী বোর্ডের ঘর এলাকার মিন্টু, জগদিশপুর গ্রামের মতিবুল ইসলামসহ অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, কেউ দুদিন, কেউ বা তিনদিন ধরে ট্রাক্টর, ভটভটি, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আলু নিয়ে এসেছেন হিমাগারে রাখার জন্য। এখনো রাস্তার বাইরে আলু নিয়ে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন।
ছোট ও বর্গাচাষিরা হিমাগারগুলোতে বুকিং দিয়েও সংরক্ষণ করতে না পারায় বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে লোকশানের মুখে পড়ছেন বলে দাবি তাদের।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হিমাগারগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
জয়পুরহাটের হিমাদ্রী হিমাগারের ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস, নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন, সাউথ পোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক জয়ন্ত কুমার সরকার বলেন, এবার আলুর উৎপাদন বেশি হয়েছে। এছাড়া ব্যবসায়ী ও কৃষক একইসঙ্গে আলু সংরক্ষণ করতে হিমাগারে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, “এ বছর ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর বেশি। আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার টন। আলু উৎপাদনের পরিমান বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।”
তিনি আরো বলেন, “একই কারণে অধিক পরিমান আলু বাজারে সরবরাহ হওয়া কৃষক দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন বলে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া অন্তত তিনমাস পর্যন্ত ঘরেই আলু সংরক্ষণের কৌশল কৃষকদের শেখানো হচ্ছে বলেও জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।