“যাত্রী এনেছিলাম। রোদে গা, হাত-পা জ্বলছে। হাঁপ লেগে যাচ্ছে।”
Published : 29 Apr 2024, 09:03 PM
তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় প্রাণ-প্রকৃতিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা।সব শ্রেণী পেশার মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রচণ্ড রোদে শ্রমজীবী মানুষরা বাইরে বেরোতে পারছেন না। মানুষের পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে পশুপাখিও।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, “সোমবার বিকাল ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা দেশের মধ্যে এ মৌসুমে সর্বোচ্চ।
“এর আগে গত শনিবারও চুয়াডাঙ্গায় ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।”
সকাল থেকেই চুয়াডাঙ্গায় ছিল ঝাঁজালো রোদ।জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন সকাল ১০টার পর থেকে ঘরের বাইরে বের হননি।নিম্ন আয়ের মানুষদের তীব্র তাপে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।রিকশাভ্যান চালকরা যাত্রী পাননি; ফলে তাদের আয় উপার্জন কমে গেছে।
১২ এপ্রিলের পর থেকে মাসের বেশিরভাগ সময় জুড়েই এ জেলার ওপর মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলমান রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।সোমবারও জেলার মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল না।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন সদর উপজেলার আড়িয়া গ্রামের শাহিন সরকার। তিনি বলেন, “তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষের মতো পশুপাখিও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পানি পানের জন্য পশুপাখি গ্রামের মাঠ ঘাট জলাশয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা লোকজনকে একটি পাত্রে পশুপাখিদের জন্য পানি রাখার অনুরোধ করে আসছি।
“এছাড়া মাঠে কোনো অসুস্থ পশু কিংবা পাখি পেলে আমরা তা নিয়ে যাচ্ছি স্থানীয় পশু চিকিৎসা কেন্দ্রে। এ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি দীর্ঘদিন।”
দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের হান্নান শেখের বাড়ির পোষা ৭-৮ মুরগি গরমে মারা গেছে বলে তিনি জানান।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু হান্নান নন; যাদের বড় মুরগির খামার আছে, প্রতিদিন তাদের খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে।বাড়িতে পোষা গরু এবং ছাগল অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গরু-ছাগল ঠিকমত খাবার খাচ্ছে না; তারা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
দুপুরে চুয়াডাঙ্গা আদালত চত্বরে যাত্রী নিয়ে গাছের ছায়ায় ভ্যানের ওপর বসে ছিলেন চালক আকালে হক। রোদে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না, তাই জিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আকালে বলেন, “যাত্রী এনেছিলাম। রোদে গা, হাত-পা জ্বলছে। হাঁপ লেগে যাচ্ছে।”
গত দশ বছরের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া ৪৩ ডিগ্রিতে আসেনি বলে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান।
২০১৪ সালের ২১ মে এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস; এরপর থেকে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ০ ডিগ্রির ওপরে ওঠেনি।
এ বছর সেই রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা উঠে গেছে ৪৩ দশমিক ০ ডিগ্রিতে।চলতি এপ্রিল মাসেই তাপমাত্রা উঠেছে গত শুক্রবার ও শনিবার ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে।
পুরো এপ্রিল মাস জুড়েই চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ওপরের দিকে থেকেছে জানিয়ে রাকিবুল বলেন, ১ এপ্রিল জেলার তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে। ২ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি, ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ৪ এপ্রিল ৩৮দশমিক ২ ডিগ্রি, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ০ ডিগ্রি, ৬ এপ্রিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠেছিল।
চুয়াডাঙ্গা শহরের মুক্তিপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বদর উদ্দিন বলেন, “এবার কোনো বৃষ্টি নেই; তাপমাত্রা সবসময়ই বেশি। যেদিন বেশি তাপমাত্রা থাকছে, জরুরি কোনো কাজ না থাকলে আমি বাইরে বের হচ্ছি না। সারাদিনই বাড়িতে থাকছি।
“বাইরে যাব কী? যে রোদ। বিকালেও বের হয়ে দেখেছি, বাতাসে আগনের উত্তাপ; সহ্য করা যাচ্ছে না।”
চলতি এপ্রিল মাসে আবহাওয়া নিয়ে কোনো সুখবর নেই বলে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান।
তিনি বলেন, “বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। মে মাসের শুরুর দিকে বৃষ্টি হতে পারে।”