এ ঘটনায় আটজনের নাম উল্লেখ করে নিহতের স্ত্রী লৌহজং থানায় মামলা করেছেন।
Published : 17 Jan 2024, 02:31 PM
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবেশী দুই যুবকের বিরুদ্ধে।
লৌহজং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলার দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের ছাতি মসজিদ এলাকায় মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনায় চার নারীকে আটক করা হয়েছে।
নিহত ৫২ বছর বয়সী মো. কালাচান সরদার ওই এলাকার রশিদ সরদারের ছেলে। তিনি একটি সিগারেট কোম্পানিতে ডেলিভারির কাজ করতেন।
নিহতের প্রতিবেশী আবুল হোসেন জানান, বাড়ির সীমানা নিয়ে কালাচানের সঙ্গে আরেক প্রতিবেশী নিজাম সরদার ও তার ভাই নুরু ইসলাম সরদারের বিরোধ চলছিল। এর জেরে নিজামের ছেলে হিরু ও নুরুর ছেলে বাবু কালাচানকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, “মাদক মামলার আসামি হিরু ও বাবু মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দিতে যায়। সেখান থেকে ফিরে কোন কারণ ছাড়াই কালাচানের বাড়ির বেড়া ভেঙে ঘরে হামলা করে। এ সময় কালাচানের সেজো মেয়ে সাদিয়া তাদের বাধা দিতে গেলে হিরু ও বাবু তাকে মারধর করে।
“পরে তারা কালাচানকে বাড়ির সামনের রাস্তায় কাঠের চ্যালা দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে।”
প্রত্যক্ষদর্শী মনির হোসেন বেপারী বলেন, “কালাচান আমাদের সঙ্গে মসজিদে নামাজ পড়ে আসেন। এরপর বাড়িতে ফিরে হামলার কথা শুনে বাড়ির দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহিন সরদারের বাড়িতে যান। কিন্তু শাহিনকে না পেয়ে আবার বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। পথে কালাচানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হিরু ও বাবু।
“এ সময় আমিসহ কয়েকজন কালাচানকে বাঁচাতে গেলে হামলাকারীরা আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে কালাচান মারা যান।”
লৌহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন জানান, কালাচানের মাথায় আঘাতের গুরুতর চিহ্ন এবং তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বাড়ির লোকজনর তাকে ঢাকায় নিতে পারে নাই। পরে এখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
কালাচানের সংসারে স্ত্রী ও চার মেয়ে আছে। তার মধ্যে বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বুধবার সকালে কালাচানের বাড়িতে গেলে তার মেজো মেয়ে সুমাইয়া বলেন, “আমার বাবাকে যে স্থানে হামলা করা হয়েছিল, সেই রক্তাক্ত স্থানটি বাবুর স্ত্রী মাবিয়া ধুয়ে ফেলে।”
নিহতের আরেক মেয়ে সাদিয়া আক্তার বলেন, “আমার বাবা সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। বাবার সম্পত্তি দখলের জন্য হিরু ও বাবুরা অনেক চেষ্টা করেছে। সেই বিরোধের জেরেই বাবাকে ইচ্ছামত পেটালো; আমাদের চোখের সামনে বাবাকে মেরেই ফেলল।”
এ ঘটনায় ৫-৬ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে নিহতের স্ত্রী সাহানা বেগম লৌহজং থানায় মামলা করেছেন বলে পরিদর্শক সাইফুল জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে বাবু ও হিরু পলাতক রয়েছে। বাবুর স্ত্রী মাবিয়া বেগমসহ চারজনকে আটক করা হলেও তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয় নাই। আর নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।