‘ছাত্রীদের ফোন নম্বর না দেওয়ায়’ কলেজছাত্রকে মারধর, মামলায় আসামি ১০

গত ২৯ মে দুপুরে কলেজের তিন তলায় স্কাউট কক্ষে নিয়ে মেহেদীকে নির্যাতন করা হয় বলে মামলার নথির বরাতে ওসি জানান।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 01:12 PM
Updated : 5 June 2023, 01:12 PM

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় ‘ছাত্রীদের ফোন নম্বর জোগাড় করে না দেওয়ায়’ এক কলেজছাত্রকে মারধরের অভিযোগে শিক্ষার্থীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সোমবার দাগনভূঞা থানায় ওসি মো. হাসান ইমাম জানান, রোববার বিকালে নির্যাতিত ওই ছাত্রের মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

নির্যাতিত মেহেদী হাসান (১৮) দাগনভূঞা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডালিয়া বাড়ির আবু নাছেরের ছেলে।

তিনি সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

মামলার আসামিরা হলেন দাগনভূঞা পৌরসভার অভিরামপুরের তৌফিক (১৮), উদরাজপুর গ্রামের সোহান (১৮), একই এলাকার মিঠু (১৮), দাগনভূঞার চৌধুরী হাটের সামির (১৮) ও নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বিজয়বাগ ইউনিয়নের রানা (১৮)। তারা ওই কলেজের বিএম (কারিগরি) শাখার শিক্ষার্থী।

মামলার বরাত দিয়ে ওসি হাসান ইমাম বলেন, মেহেদী হাসানকে তার ক্লাসের ছাত্রীদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য ওই কলেজের তৌসিফ, সোহান, মিঠু, রানা ও সামির চাপ দিতেন।

এতে তিনি রাজি না হওয়ায় তারা মেহেদীকে গত ২৯ মে দুপুরে কলেজের তিন তলায় স্কাউট কক্ষে নিয়ে নির্যাতন শুরু করেন।

এ সময় তারা মেহেদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেটের আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেন। নির্যাতনকারীরা কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে মেহেদীকে চেয়ারের উপর থেকে ফেলে দেন।

তিনি আরও বলেন, এ ছাড়া তারা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি টের পেয়ে এগিয়ে এলে নির্যাতনকারী শিক্ষার্থীরা স্থান ত্যাগ করেন।

মামলার আসামিরা পলাতক রয়েছেন; তাদের গ্রেপ্তারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।  

এ বিষয়ে নির্যাতিত মেহেদী হাসান বলেন, “বিএম শাখার তৌসিফ, সোহান, মিঠু, রানা ও সামির বিভিন্ন সময় আমাকে রাজনৈতিক মিছিলে যেতে বলত; আমি যেতাম না। কলেজের পেছনে গিয়ে সিগারেট ও ইয়াবা সেবন করত; আর আমাকে জোর করত সেখানে যেতে।”

তিনি আরও বলেন, “আবার কলেজে কোনো সুন্দরী মেয়ে আসলে তার ফোন নম্বর নিয়ে দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দিত। তারা রাস্তা-ঘাটে বিভিন্ন সময় আমাকে উত্ত্যক্ত করত ও চড়-থাপ্পড় মারত।” 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীদের জানান, এজহারভুক্ত আসামিরা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন বিশৃঙ্খল কার্যক্রম করে আসছেন।

ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, “কলেজের ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। অপরাধীদের কোনো দল থাকে না। আমরাও এ ঘটনায় দোষীদের বিচার চাই।”

সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মনজুরুল হক পাপ্পু বলেন, “মেহেদী হাসানকে নির্যাতনের ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যেই বিএম এর ছাত্র সোহানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আগামী মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে আমরা সকলকে চিহ্নিত করতে পারব।”