তবে ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয় বলে দাবি করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
Published : 14 Sep 2024, 10:15 PM
গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা শওকত আলী দিদারের নিহতের ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকালে সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া নিজ এলাকা থেকে তাদের আটকের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান।
আটকরা হলেন- আলিমুজ্জামান চৌধুরী (৫০) ও সিজার শেখ (৪২)।
শুক্রবার বিকালে জেলা শহরের বেদগ্রাম মোড়ে সভা শেষে গাড়িবহর নিয়ে গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী।
তাদের গাড়িবহর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা বাধা দেন। এ নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসএম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত হন। এছাড়া এস এম জিলানী ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্নাসহ বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হন।
এদের মধ্যে জিলানী, তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা না হলেও সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে আটক করা হয় বলে জানান গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান।
নিহত দিদারের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে হস্তান্তর
এদিকে নিহত শওকত হোসেন দিদারের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে বুঝে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওসি আনিচুর রহমান।
শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বুঝে নেন নিহতের স্ত্রী রাবেয়া রহমান ও শ্বশুর হাবিবুর রহমান।
পরে তারা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার জুরাইনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এর আগে দিদারের স্ত্রী রোকেয়া রহমান বলেন, “ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারি, এসএম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ওই বহরে আমার স্বামী ছিল। তার খবর নেওয়ার জন্য মোবাইলে ফোন দিই। পুলিশ আমার স্বামীর ফোন রিসিভ করে মৃত্যুর খবর দেয়। খবর শুনে আমরা গোপালগঞ্জে ছুটে আসি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
রোকেয়া আরও বলেন, “আমার ছোট দুই ছেলে। বড়টি প্রথম শ্রেণিতে আর ছোটটি কেজিতে পড়ছে। ছেলেরা বাবা হারিয়েছে; আমি বিধবা হয়েছি। একমাত্র অবলম্বন স্বামীকে হারিয়ে আমি দিশেহারা।”
হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান তিনি।
কোটালীপাড়ায় প্রতিবাদ মিছিল
এসএম জিলানীর গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।
শনিবার উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে একটি বিক্ষোভ মিছিল স্থানীয় ঘাঘর বাজার চৌরাস্তা থেকে বের করা হয়।
মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঘাঘরকান্দা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়।
সেখানে এক সমাবেশে দলটির স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
বক্তরা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেইসঙ্গে দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
পরে নেতারা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি আহত কয়েকজন নেতাকর্মীকে দেখতে যান।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার জেলা আওয়ামী লীগের
ঘোনাপাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতির গাড়িবহরে হামলাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে এর সঙ্গে তারা জড়িত নয় বলে দাবি করেছে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ।
শনিবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইলিয়াস হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল কিছু বিক্ষুদ্ধ জনতার সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।
তবে এ ঘটনা স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ দলের কোনো সহযোগী ও অঙ্গসংগঠন জড়িত নয়।
জেলা আওয়ামী লীগের দাবি, শুক্রবার বিএনপির কিছু বহিরাগত লোক ঘোনাপাড়ায় শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি -ব্যানার ছিঁড়ে ফেলতে গেলে তাদের সঙ্গে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেমূলক চক্রান্ত।
আওয়ামী লীগ অতীতে যেমন অহিংস আন্দোলন করেছে, ভবিষ্যতেও শান্তিপূর্ণভাবে সব কর্মসূচি পালন করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: