কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, আহত ২

ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 10:03 AM
Updated : 3 June 2023, 10:03 AM

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এতে আহত হয়েছেন দুইজন।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ৫ নম্বর ধরমপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই হামলার সময় বঙ্গবন্ধু ও  প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ আসবাবপত্র ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরিফুজ্জামান নবাব।

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু (৫৫) ও সুলতান আলী (৪০)। আহতদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে পরিবারের লোকজন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কুব্বাত আলীর ছেলে শরিফুজ্জামান নবাব বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বসেন এবং দলীয় কার্যক্রম চালায়। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই অফিসে এসেছিলেন। সেই অফিস ভাঙচুর করেছে লেবাসধারী দুর্বৃত্তরা।”

নবাব অভিযোগ করে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে একটি পারিবারিক গানের অনুষ্ঠানে মাতলামি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তার জেরে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে সাতবাড়িয়া গ্রামের মণ্ডলপাড়ার জিদান, রাসেল, রাজিব, শাহীনসহ ২০-৩০ জন দেশীয় অস্ত্রসহ হামলা চালায়।

“এ সময় তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারপিট করে, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ছিঁড়ে ফেলা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করবো। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজ ৫ নম্বর ধরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হকের ছোট ভাই।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, “এটা আদি আওয়ামী লীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব।”

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ইউনুস আলী বলেন, “কার্যত আওয়ামী লীগের দলের মধ্যেই যে গ্রুপিং আছে দীর্ঘদিন ধরে, মাঝে মধ্যেই ছোটখাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে কাটাকাটি-হানাহানি হচ্ছে। এই ঘটনা তারই জেরে ঘটেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শী চা বিক্রেতা খাকসার আলী বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। নেতা-কর্মীদের তারা মারপিট ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।

“এ সময় তারা আমার চা দোকানে হামলা করে কেটলি, গ্যাসের চুলা, চেয়ার, টেবিল রামদা দিয়ে কেটে ফেলেছে এবং ভাঙচুর করেছে।”

ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে একটি গানের অনুষ্ঠানে দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। এতে রাজু নামের এক যুবককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়।”

এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “কে বা কারা তাদের উপর হামলা ও অফিস ভাঙচুর করেছে তা আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”

“ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালু ও তার লোকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”

ধরমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামছুল হক বলেন, “এটা আসলে যারা অভিযোগ দিচ্ছে তাদেরই নিজেদের ছেলেপেলেরা ‘হুমজিক্যালি’ করেছে। তবে এ বিষয়ে আমি ইতোমধ্যে উপজেলাসহ ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি, আমরা খুব শীঘ্রই বসে এটা ঠিক করে নেবো।” 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম চুন্নুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে এবং খুদে বার্তা প্রেরণ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানার সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি এলাকার বাইরে ছিলাম, আমি শুনেছি কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু বিস্তারিত কিছুই জানি না। ঘটনা যা কিছুই ঘটুক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এর সমাধান করে দিবো।”

ভেড়ামারা থানার পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি এবং এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটকও করেনি পুলিশ। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে ওই এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং পুলিশ মোতায়েন আছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।