১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবের একটি কক্ষে ওই সাংবাদিককে আটকে নির্যাতন করায় তিনি মারা যান বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
Published : 04 Mar 2024, 11:10 PM
বরগুনা সদরের সাংবাদিক তালুকদার মাসউদকে প্রেসক্লাবে আটকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
দুই দিন আগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার বিকালে নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান বরগুনা সদর থানার ওসি আবুল কাশেম মো. মিজানুর রহমান।
১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবের একটি কক্ষে ওই সাংবাদিককে আটকে রেখে নির্যাতন করায় তিনি মারা যান বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে ডেথ রেফারেন্সে হার্ট অ্যাটাকে তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানান বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কাদের।
নিহত তালুকদার মাসউদ দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছিলেন এবং গোরাপদ্মা এলাকার আবদুল ওয়াহাব মাস্টারের ছেলে। তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা একজন স্কুল শিক্ষিকা।
আসামিরা হলেন- এনটিভির জেলা প্রতিনিধি আ স ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ) (৪৭), আরিফুল ইসলাম মুরাদ (২৮), মো. কাসেম হাওলাদার (৩০), যমুনা টিভির জেলা প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন (৪০), মো. সাইফুল ইসলাম মিরাজ (৩০), মো. ছগির হোসেন টিটু (২৮), ডিবিসি নিউজের জেলা প্রতিনিধি আবদুল মালেক মিঠু (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম মেহেদী (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ এস এম সিফাত (২৭), শহিদুল ইসলাম শহিদ (৪৫) এবং মোহনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি মো. জাফর হোসেন হাওলাদার।
মামলায় বলা হয়েছে, “ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত থাকায় তালুকদার মাসউদ বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন করেন। এতে বরগুনা প্রেসক্লাবের কিছু সদস্য তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
“১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলছিলেন তালুকদার মাসউদ। তাকে ক্যারাম খেলতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে এনটিভির প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ গালিগালাজ শুরু করেন।
“এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সোহেলসহ অন্যরা প্রেসক্লাবের গেইট বন্ধ করে হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও গেইট তালাবদ্ধ রাখা হয়।
“প্রায় এক ঘণ্টা পর ওসি এ কে এম মিজানুর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশিরুল আলম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে তালুকদার মাসউদকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
“সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার ১১ দিন পর ২ মার্চ রাত ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তালুকদার মাসউদ মারা যান।”
মামলার বাদী সাজেদা বলেন, “জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকে সাংবাদিক সোহেল হাফিজ ও তার অনুসারীরা আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। এ নিয়ে একাধিকবার তিনি আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছেন।
“ঘটনার দিন সোহেল হাফিজসহ অন্যরা আমার স্বামীকে প্রেসক্লাবে আটকে নির্যাতন করায় তিনি মারা গেছেন। আমার একমাত্র মেয়ে পড়াশোনা করে, ছেলের বয়স মাত্র ১৩ বছর। স্বামীর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনিসহ প্রেসক্লাবের সভাপতির নেতৃত্বে বেশিরভাগ সদস্য কলকাতায় ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেখানে তারা কলকাতা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের উপ-হাই কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তিনি বলেন, “১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহিষ্কৃত সদস্যরা বহিরাগতদের নিয়ে প্রেসক্লাব দখল করতে আসেন। তালুকদার মাসউদকে তারা ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন।
“বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহেল হাফিজ সেখানে আসলে তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।”
প্রধান আসামি সোহেল হাফিজ বলেন, “ঘটনার দিন পুলিশকে খবর দিয়ে প্রেসক্লাবের গেইটে তালা দেওয়া হয়েছিল। তারা দুপক্ষ আলাদা রুমে বসেছিলেন। প্রায় ৪৫ মিনিট পর পুলিশ আসেন।
পুলিশ দেখে গ্রেপ্তারের ভয়ে তালুকদার মাসুদ অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান এ সাংবাদিক।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, “১৯ ফেব্রুয়ারি তালুকদার মাসুদ বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে নিজের ইচ্ছায় বরিশাল হাসপাতালে গেছেন। সেখান থেকে ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা শেষে বরগুনার বাসায় আসেন।
“২ মার্চ সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাক করলে তালুকদার মাসউদকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মারা যান তিনি।”
ডেথ রেফারেন্সে চিকিৎসক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তালুকদার মাসউদের মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বলে জানান গোলাম মোস্তফা।
তালুকদার মাসউদের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হয়রানি ও প্রেসক্লাবের সুনাম নষ্টের অভিযোগ করেছেন তিনি।
এর আগে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলার অভিযোগে ২৯ ফেব্রুয়ারি তালুকদার মাসউদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নামে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়।