নির্মাণ কাজ গত এক সপ্তাহ থেকে চালিয়ে আসছিল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
Published : 26 Feb 2024, 09:54 PM
আপত্তির পরও কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের দেয়াল ভেঙে জনসাধারণের জন্য একটি টয়লেট বানাচ্ছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। পরে বিষয়টি জেনে নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা এসেছে পটুয়াখালীর ডিসির কাছ থেকে।
ওই বৌদ্ধ বিহার কমিটির নেতারা ধর্মীয় উপাসনালয়ের চৌহদ্দির মধ্যে শৌচাগার নির্মাণের পদক্ষেপের বিরোধিতা শুরু থেকেই করে আসছিলেন। তবে তা আমলে না নিয়ে গত এক সপ্তাহ থেকে নির্মাণ কাজ চালিয়ে আসছিল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার টয়লেটের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনার দোহাই দেন।
তবে বৌদ্ধ বিহার কমিটির নেতারা প্রতিকার চেয়ে আবেদন করলে ডিসি নুর কুতুবুল আলম সেখানে টয়লেটের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনা জানার পর পরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
“পরবর্তীতে সবাইকে নিয়ে বসে কাগজপত্র দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি জানান, সাত-আট দিন ধরে নির্মাণ কাজ চলার পর এখন তা স্থগিত রয়েছে।
গত রোববার ডিসির কাছে আবেদন করেন বৌদ্ধ বিহার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ভদন্ত ইন্দ্রবংশ ভিক্ষু।
সাধারণ সম্পাদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিহারের অধীনে ১৯৪৩ সালে ২ একর ৪৪ শতক জমির দলিল রয়েছে। এর মধ্যে কুয়াকাটা রক্ষা বেড়িবাঁধ করতে এক একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
“এরপর যে জায়গা রয়েছে সেটি মন্দির কমিটি দখলে রেখেছে। কিন্তু কমিটিকে না জানিয়েই সীমানা দেয়াল ভেঙে বিহারের ভেতরে পৌরসভার মেয়র পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছেন।“
তার ভাষ্য, “এখন আমাদের বিহারের অল্প জমি রয়েছে। তাদের টয়লেটটি ওখানেই কেন করা লাগবে। অন্যত্র কত সরকারি সম্পত্তি রয়েছে সেখানে করলেই তো হয়।”
পৌরসভার এমন উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কমিটির নেতারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তারা লেখেন, বৌদ্ধ বিহার কমিটির কারো সঙ্গে আলাপ না করে এমন নিপীড়নমূলক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না রাখাইন বৌদ্ধ সমাজ।
পোস্টে বলা হয়, “উন্নয়ন করছে ভালো কথা, তাই বলে বৌদ্ধ বিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট। এতো জায়গা পৌরসভার কিন্তু চোখে পড়ে না, চোখ শুধু বৌদ্ধ বিহারের জায়গাটাই পড়ে। এতে করে আমরা বুঝতে পারছি বৌদ্ধদের নানা কৌশলে নিপীড়ন, দমন-সাম্প্রদায়িক মনোভাব দৃষ্টিতে দেখছে এই বৃহত্তর সমাজ।”
প্রতিকার না পেলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার কমিটির কোষাধ্যক্ষ লুমা রাখাইন।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে জরুরিভিত্তিতে একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করতে বলেছেন। আমি টয়লেট নির্মাণ করতে রাজি ছিলাম না। কারণ আমার ফান্ডে টাকা নাই।”
তিনি বলেন, সম্প্রতি রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের একটি দল কুয়াকাটায় এসেছিলেন। ওই টিমের সদস্যদের টয়লেট ব্যবহার নিয়ে কিছুটা সমস্যা হয়। এ জন্যই তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও জরুরিভিত্তিতে টয়লেট নির্মাণ করে দিতে বলেন।
ওই দুই কক্ষের পাবলিক টয়লেট নির্মাণে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, “ইউএনও মহোদয়কে আমি বলেছি আমার তো টেন্ডার করা দরকার। আমার ফান্ডে টাকা নাই। তারপরও ইউএনও বলেছেন- আমি যদি টাকা ম্যানেজ করতে না পারি, তাহলে উপজেলা পরিষদ থেকে অথবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় (পিআইও) থেকে ব্যবস্থা করা হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই এলাকায় রাখাইন মার্কেট রয়েছে এবং তার সামনে একটি বড় মাঠ রয়েছে। মাঠের চারপাশেও বহু মার্কেট রয়েছে। এসব মার্কেটে বহু পর্যটক কেনাকাটা করতে আসেন। কিন্তু ওই এলাকায় কোনো পাবলিক টয়লেট নাই। তাই মেয়র একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে দিচ্ছেন।”
কিন্তু নির্মাণের স্থানটিতে বিহারের সম্পত্তির বিষয় উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, “বিহার তো অনেক দূরে এবং পাশেই তো একজন মুসলমানের সম্পত্তি ওখানে বিহারের সম্পত্তি হয় কীভাবে আমি বুঝি না।”
তিনি বলেন, “যে জায়গায় টয়লেট নির্মাণ হচ্ছে তার পাশেই পুরাতন পরিত্যক্ত টয়লেট ছিল। রাখাইনদের সঙ্গে মেয়রের কথা হয়েছে ওই টয়লেট মেরামত করে দিয়ে পাশেই পর্যটকদের জন্য একটি নতুন টয়লেট নির্মাণ করে দেবেন তিনি।”
ইউএনও বলেন, “তারপরও তাদের কোনো আপত্তি থাকলে সেটা আমরা খতিয়ে দেখব।”