প্রায় আড়াই বছর আগে ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্ট ঘিরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের মামলায় কারাবরণকারী সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসকে আবার থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলার শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাছাড়া নোয়াগাঁওয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দিরাই ও শাল্লা থানার পুলিশ গ্রামে টহল দিচ্ছে।
শাল্লা থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “কয়েক দিন আগে ঝুমনের ফেইসবুক আইডি থেকে মন্দির ও মসজিদ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে আবারও দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নোয়াগাঁও গ্রামে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
“একই কারণে ঝুমনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।”
২০২০ সালের ১৫ মার্চ হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ফেইসবুক পোস্টে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তোলেন ঝুমন দাস। এর দুই দিন পর নোয়াগাঁও গ্রামে হেফাজতে ইসলামের ব্যাজ মাথায় নিয়ে ‘হেফাজতের অ্যাকশন, মামুনুলের অ্যাকশন, বাবু নগরীর অ্যাকশন’ স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়। হাজারো মানুষ দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করে।
সে সময় পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে ঝুমনকে কারাগারে পাঠায়। পরে জামিনে মুক্ত হন ঝুমন। তাছাড়া পুলিশ ও এলাকাবাসী বাদী হয়ে হেফাজত অনুসারী দেড় হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
কয়েক দিন আগে ঝুমন ফেইসবুকে মন্দির ও মসজিদ নিয়ে আরেকটি পোস্ট দিয়েছেন বলে পুলিশের ভাষ্য। তবে এই পোস্টে কী আছে সে বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।
জেলার পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ বলেন, “ঝুমনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলা যাবে না।”
ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রানী দাসও থানায় গিয়েছেন।
সুইটি বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ি থেকে আমার স্বামীকে নিয়ে এসেছে শাল্লা থানার পুলিশ। আমিও থানায় তার সঙ্গে এসেছি। আমরা এখনও থানায় আছি। পুলিশ তাকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসা করছে।”
কেন ঝুমনকে থানায় নেওয়া হয়েছে জিজ্ঞেস করলে সুইটি বলেন, “পুলিশ বলেছে মন্দির ও মসজিদ নিয়ে ফেইসবুকে কী একটা পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেটার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে এসেছে। তবে এ ধরনের পোস্ট আমার চোখে পড়েনি।”
ঝুমনের মাকেও পুলিশ একই কথা বলেছে বলে মায়ের ভাষ্য।
ঝুমনের মা নিভা রানী দাস বলেন, “তিন দিন আগে কয়েকজন পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে জানায়, তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে এসেছে। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এসে ঝুমনকে শাল্লা থানায় নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায়, সার্কেল এএসপি তাকে ডেকেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ আমাদের জানায়।”