কুমিল্লায় যুবলীগ নেতার সমালোচনায় সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক

ওই যুবলীগ নেতা মুজিবুল হক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2022, 07:18 PM
Updated : 29 July 2022, 07:18 PM

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কুমিল্লার এক যুবলীগ নেতার সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক।

শুক্রবার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর বিএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সভা তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

সেখানে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারের সমালোচনা করেন।

গত বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন শাহজালাল মজুমদার। সেখানে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ তোলেন।

সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।

কাশিনগর বিএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজিবুল হক বলেন, শাহ জালাল মজুমদারের কাছে মানুষ টাকা পায়। পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ না করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। পাওনাদারদের ভয়ে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে যান না।

“এতে আমি, আমার পরিবার ও আমার কোনো রাজনৈতিক কর্মীর দোষ নেই। অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া মোস্তফা মনিরুজ্জামান জুয়েল এবং শাহজালাল মজুমদার আপন চাচাতো-জ্যাঠাতো ভাই। তাদের পরিবারের মধ্যে সমস্যা চলছে। শাহজালাল পারিবারিক সমস্যাকে রাজনৈতিক রূপ দিতে চাচ্ছেন।”

মুজিবুল হক আরও বলেল, শাহজালাল মজুমদার যাদের নিয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন এলাকায় তাদের কোনো ভিত্তি নেই। কোনো রাজনৈতিক নেতাও তার সাথে নেই।

“তাই এই সংবাদ সম্মেলনের কোনো দাম নেই আমার কাছে। আমি তাকে যুবলীগের আহবায়ক বানালাম, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানালাম, এখন সে আমার সাথে বেঈমানী করেছে। কোনো বেঈমানের স্থান দলে নেই।”

মুজিবুল হক আরও বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শাহজালাল মজুমদার দলের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার শ্বশুর আলী আশ্রাফের পক্ষে কাজ করেছেন।

“নির্বাচন পরবর্তীতে বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ হলে তিনি দল এবং আমার সম্পর্কে অশালীন কথা বলেছেন। এজন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পথ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে।”

উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাকে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক পদে অনাস্থা প্রাদান করেছেন বলেও জানান সাবেক রেলওয়ে মন্ত্রী।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোখলেছুর রহমান মজুদারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া হাসান, পৌর মেয়র জি এম মীর হোসেন মিরু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামাল উদ্দিন প্রমুখ।

গত বুধবার বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল মজুমদার বলেন, অস্ত্র হাতে ভাইরাল তার উপর হামলাকারী মোস্তফা মনিরুজ্জামান জুয়েল গ্রেপ্তার হলেও স্বস্তিতে নেই তিনি। কারণ এমপি মুজিবুল হকের নির্দেশে তার অনুসারীরা ইউপি কার্যালয় পাঁচ মাস তালাবদ্ধ রেখেছেন। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে তার। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।

শাহজালালের অভিযোগ, গত বছর ডিসেম্বরে ইউপি নির্বাচনে এমপি সাহেবের পছন্দের মেম্বার প্রার্থী মনির হোসেনের পরাজয়ের দায় তার ওপর চাপিয়ে নানাভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে। কার্যালয়ে যেতে বারণ, এমনকি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৫-৪০ জন লোক ইউপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে শাহজালাল অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনে।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার পথে অস্ত্রধারী জুয়েলের নেতৃত্বে সাত-আটজন যুবক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

জুয়েলের হাতে থাকা অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ছবিটি প্রকাশ হয়।

মুজিবুল হকের নির্দেশেই জুয়েল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছেন বলে শাহজালালের অভিযোগ।