“আমরা ৪৪ বছর ধরে থিয়েটার চর্চা করে আসছি। এতটা তাণ্ডবের শিকার কখনই হইনি। এত বড় বিপর্যয় আগে আসেনি”, বলেন সাংস্কৃতিক কর্মী পলাশ খন্দকার।
Published : 09 Aug 2024, 07:35 PM
সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন জেলার মত বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনও আক্রান্ত হয়েছে। দেশের প্রাচীন নাট্যদল ‘বগুড়া থিয়েটার’ লুট করার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত এক সাংস্কৃতিক কর্মী।
বগুড়া থিয়েটারের সহসভাপতি পলাশ খন্দকার শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ৫ অগাস্ট বিকেলে হামলার শিকার হয় তাদের সংগঠন।
সেদিনই সরকার পতনের দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের বাইরে চলে যান।
এই বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীরা ছাড়াও সমর্থকদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে বেশুমার লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ।
আক্রান্ত হয়েছে দেশের সিংহভাগ ভাস্কর্য, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রায় সব স্মৃতি ফলক।
হামলার শিকার হয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনও। সিনেমা হল থেকে শুরু করে শিল্পকলা অ্যাকাডেমি, শিশু অ্যাকাডেমিও আক্রান্ত হয়।
বগুড়া থিয়েটারের পলাশ খন্দকার বলেন, “আমরা ৪৪ বছর ধরে থিয়েটার চর্চা করে আসছি। এতটা তাণ্ডবের শিকার কখনই হইনি। এত বড় বিপর্যয় আগে আসেনি।”
হামলায় নাট্যদলটির প্রায় সব নাটকের সেট, লাইট, কস্টিউমস, বিভিন্ন নথিপত্র, বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছুই অবশিষ্ট নেই।”
আগুন দেওয়ার আগে থিয়েটারের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়, এরপর ভাঙচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না বলেন, “সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস কেন পুড়বে? এরা কারা? খুঁজতে হবে প্রসাশনকেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর কিসের ইঙ্গিত বহন করে?
“মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাকসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বিরল ছবি, নথি এখানে সংরক্ষিত ছিল। সব জ্বালিয়ে দিয়েছে। নাটকের যন্ত্রপাতি আর উপকরণ অবশিষ্ট নেই। মুক্তিযুদ্ধের বগুড়ার ইতিহাসের বিরল ছবি আর পাব না। আগামী প্রজন্মকেও দেখাতে পারব না। যা আমি বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে প্রদর্শন করতাম। এই কষ্ট আমি ইথারে ভাসিয়ে দিলাম।”
আরও পড়ুন:
২২ জেলায় শিল্পকলায় হামলা, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-চুরি