বানের পানি কমতে শুরু করায় সোমবার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেকেই ফেনীর দিকে আসছেন।
Published : 26 Aug 2024, 11:10 PM
নোয়াখালীর সোনাপুরের বাসিন্দা ইলিয়াসের পাঁচ বছর বয়সী ভাগ্নে ফেনীর পরশুরামের একটি মাদ্রাসায় থেকে পড়ালেখা করে। হঠাৎ বন্যায় ফেনী বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন ইলিয়াস।
ফেনীর পথে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ থাকায় উপায়ান্তর না দেখে শেষে ভাগিনার খোঁজে পানিতে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
পাক্কা দুই দিনের চেষ্টায় পানিতে ভিজেই অবশেষে পৌঁছাতে পারেন পরশুরামের ওই মাদ্রাসায়।
সোমবার ভাগ্নে ইয়াসিনকে নিয়ে সোনাপুর ফিরছিলেন ইলিয়াস। সড়কের হাঁটু পানি ভাঙতে ভাগ্নে তুলে নিয়েছেন কাঁধে।
আদরের ভাগ্নেকে পেয়ে সব কষ্টই যেন উবে গেছে ইলিয়াসের। কথায় তার স্বস্তির ছাপ, “ভাগিনারে পাইছি, আলহামদুলিল্লাহ।”
বিরতি দিয়ে দুই দিনে পরশুরাম ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় পৌঁছানোর পর তৃতীয় দিন ভাগ্নেকে নিয়ে ফেরার পথে ত্রাণের একটি গাড়ি থেকে পাওয়া খিচুড়ি খাচ্ছিলেন ইলিয়াস।
ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে উঁচু একটা বালির স্তূপে বসে কথা হয় ইলিয়াসের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “শনিবার সকালে মহিপাল পর্যন্ত এসে হাঁটা শুরু করছি। কোথাও কোমর পানি, কোথাও বুকের উপর পানি দিয়ে যাইতে থাকি। মাঝখানে দুই রাত দুই আশ্রয়কেন্দ্রে আছিলাম। আজকে সকালে মাদ্রাসায় গিয়ে ভাগিনারে নিয়ে আবার রওনা দিছি।”
তবে ভাগ্নে ইয়াসিন মাদ্রাসায় ভালোই ছিল, ওখানে খাওয়া-দাওয়ারও কষ্ট হয়নি বলে জেনেছেন। তবুও কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় পরশুরামে যান ইলিয়াস।
এদিকে বানের পানি কমতে শুরু করায় সোমবার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া উপজেলার অনেকেই ফেনীর দিকে আসছেন।
যারা ফিরছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বাড়ি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, থাকার মতো অবস্থা নেই। তাই আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছেন। আবার অনেকে আসছেন খাবারের খোঁজে।
দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে শিলুয়া এলাকা থেকে ফেনীর দিকে পায়ে হেঁটেই আসছিলেন ওমর ফারুক। গত পাঁচ দিনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই, তবুও শহরে ভাড়া বাসায় থাকা ফুপাত বোনের কাছে যাচ্ছেন তিনি।
পেশায় অটোচালক ওমর ফারুক বলেন, “পানি কমার পর ঘরে গিয়ে দেখি ঘর ভাঙা। মাটির ঘর ছিল, একবারে মিশা গেছে। এখন দেখি সার্কিট হাউজের কাছে ফুপাত বোনের বাসার দিকে যাই। জানিনা তারাও আছে কি না।”
এ কয়দিন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওমর ফারুক।
“মসজিদে খেয়ে না খায়া আর কয়দিন? বাচ্চা-কাচ্চারাও কয়দিন খাইতে পারতেছে না।”
খাবারের খোঁজে ছাগলনাইয়া থেকে এসেছেন রিয়াদ। তার বাড়িতে বুকসমান পানি ছিল, এখন কিছুটা কমলেও ফেরার মতো হয়নি এখনও। মা, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে বন্যার শুরুতে গত বুধবার রাতে স্থানীয় একটি স্কুলের ছাদে আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, “কয়দিন ধইরা কেউ দিলে খাইতেছি, না দিলে খাইতেছি না। পানি যে খাব, পানিটাও নাই।”
ত্রাণ বিতরণ নিয়েও অসন্তুষ্টি রিয়াদের।
“কেউ পাইতেছে, কেউ পাইতেছে না। এখন পরিবারের সবাইরে রাখি শহরে আইসছি। যদি কারও কাছ থাকি কিছু পাই। টাকা-পয়সাও নাই যে কিছু কিনি নিয়ে যাব।”
মুহূর্তের মধ্যে বুধবার রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পানি বেড়ে যায়। কোনোমতে নিজেরা আশ্রয় নিতে পারলেও ঘরের তেমন কিছুই রক্ষা করতে পারেন নি রিয়াদ।