১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির ভগবান টিলায় আট সহযোদ্ধাসহ এম এন লারমা নিহত হন।
Published : 11 Nov 2022, 12:51 AM
মৃত্যুবার্ষিকীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্মরণে নানা অনুষ্ঠান হয়েছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে।
বুধবার রাঙামাটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে রাঙামাটি শিল্পকলা একাডেমিতে হয় আলোচনা সভা।
স্মরণসভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা।
এ সময় তিনি বলেন, এই পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মীরা খুন হয়েছে; যাদের মধ্যে চুক্তির পর খুন হয়েছে প্রায় হাজার খানেক। এরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে নিহত হয়েছেন।
স্মরণসভার আগে সকালে শোভাযাত্রা বের করা হয়।
স্মরণসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য গৌতম চাকমা।
বক্তব্য রাখেন হিল উইমমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা নান্টু, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সহ-সধারণ সম্পাদক আশিকা চাকমা, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর সভাপতি ভবতোষ দেওয়ান, এম.এন. লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা ।
সভায় বক্তারা বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা শুধু পাহাড়ের মানুষের নেতা ছিলেন না; তার সংগ্রাম ছিল দেশের সকল শ্রেণির নিপীড়িত গণমানুষের পক্ষে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
বক্তারা পার্বত্য চুক্তি নিয়ে সরকার তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না উল্লেখ করেন এবং এর ফলে সাধারণ মানুষ হাতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন। তারা সরকারের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, সকালে খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ারে এম এন লারমার ভার্স্কয্যে শ্রদ্ধা জানানোর পর সূর্যশিখা ক্লাবে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আরাধ্য পাল খীসা।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুজন চাকমা, যুব সমিতির সভাপতি জনপ্রিয় চাকমা, মহিলা সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর কমিটির সভাপতি প্রত্যয় চাকমা প্রমুখ।
১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকার মাওরুম গ্রামে জন্ম নেন মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার ভগবান টিলায় নিজের গঠিত শান্তি বাহিনীর একদল বিভেদপন্থির হাতে আট সহযোদ্ধাসহ নিহত হন।
এমএন লারমা ছিলেন ১৯৭৩ সালের সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের সংবিধানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার নেতৃত্বে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’; যে সংগঠনটির সদস্যরা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরের মাধ্যমে অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও অঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার বড় ভাই।