রংপুরে ‘অসদুপায়ে’ অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভ, দুদকের মামলা

তবে দুদকের এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মামলার আসামি।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 05:00 PM
Updated : 17 May 2023, 05:00 PM

রংপুরে অসৎ উপায়ে নিয়োগ লাভের অভিযোগে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘অধ্যক্ষ’র বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

প্রায় দুবছর অনুসন্ধান শেষে গত মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ মামলাটি করেন বলে ওই কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রংপুরের সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবীথি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিনের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে মামলাটি করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট জমা দিলে আদালতে তোলা হবে।”

মামলার নথি থেকে জানা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন ২০০২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০০৩ সালের ২৯ জুলাই পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাচিবিক দায়িত্বে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থেকে তিনি নিজেই অধ্যক্ষ পদের প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন। এ ছাড়া তিনি সাজানো একটি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে।

প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৮৭ সালের ৭ জুলাই সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবীথি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন। সেই পদে দায়িত্ব পালনকালে সাবেক অধ্যক্ষের অবসরে যাওয়ার কারণে ২০০১ সালের ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ম্যানেজিং কমিটি সভার সিদ্ধান্তে স্থানীয় একটি পত্রিকায় ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

তবে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কী হবে, তা ইচ্ছাকৃতভাবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষক জানান।

আরও জানা যায়, নাহিদ ইয়াসমিন ১৯৭৭ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৭৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দিয়ে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এ ছাড়া ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় এবং ১৯৮৩ সালে একই বিভাগ থেকে এমএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ লাভের আবেদন করার জন্য উপযুক্ত ছিলেন না মর্মে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, সমাজ কল্যাণ বিদ্যাবীথি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ২০০২ সালের ১৬ নভেম্বর প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে যে ছয়জন প্রার্থী অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন, তাদের মধ্যে নাহিদ ইয়াসমিনসহ পাঁচজনই ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আর বাকি একজন শশাঙ্ক শেখর রায় রংপুরের মাহীগঞ্জ কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে নাহিদ ইয়াসমিনের চেয়ে বাকি পাঁচজনেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি ছিল। তার মধ্যে মর্জিনা খাতুন ও শশাঙ্ক শেখর রায় আবেদন করলেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেননি। বাকিরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে নাহিদ ইয়াসমিন সর্বোচ্চ ২৬ নম্বর পেয়ে প্রথম হন এবং তিনি ওই বছরের ৩০ জুলাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।

মামলার নথি থেকে আরও জানায়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর জনবল কাঠামো নীতিমালায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণির অনার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। এ ছাড়া সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে নাহিদ ইয়াসমিনের দুটি তৃতীয় শ্রেণি (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে) থাকায় তার নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটেছে।

তবে দুদকের এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার বিষয়টি এখনও জানি না। আমি কোনো কাগজপত্র হাতে পাই নাই; কাগজপত্র হাতে আসুক, তারপর বিষয়টি দেখব।”